স্মৃতিগদ্য

সেদিন ছিলো বৃহঃস্পতিবার। বৃহঃস্পতিবার আমাদের বিদ্যালয়ে অর্ধদিবস। তাই সেদিন বাসায় এসে দুপুরের খাবার খেতে পারি। একবার বৃহঃস্পতিবারে আমি স্কুল থেকে বাসায় আসি। সেদিন খালামণি এক জরুরি কারণে আমাদের বাসায় আসে। তাছাড়া, বিকেলে দন্ত বিশেষজ্ঞের চেম্বারে যেতে হবে। আম্মুও আমার ছোট বোনকে শিশু একাডেমীর আবৃত্তি ক্লাসে নিয়ে যাবে বিকেল চারটার দিকে। তাই সব মিলিয়ে এক রকম ব্যস্ততা। আমি দেড়টার মধ্যে গোসলের কাজ সেরে ফেলি। আম্মু রন্ধনকার্য সম্পন্ন করে। সেদিন আম্মু কী মনে করে যেন হালিম রান্না করে।

এক্ষেত্রে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়, আম্মু ডাল ও হালিম একই ধরণের একই আকৃতির পাতিলে রান্না করে। আম্মু ডাইনিং টেবিলে খাবার পরিবেশন করে। ডাল ও হালিমের পাতিল দু’টো পাশাপাশি রাখা হয়। খাবার টেবিল গরম খাবারের গন্ধে ম ম করছে। দেখতে দেখতে আড়াইটা বেজে যায়। সবাইকে কিছুক্ষণের মধ্যেই বের হতে হবে। তাই একরকম তাড়াহুড়ো শুরু হয়। যাওয়ার জন্য ড্রেস হয়ে তৈরি হয়ে নিলাম। পরে খাবার টেবিলে খেতে বসি। ভাতের সাথে ভাজি সহযোগে খাওয়া শুরু করি। আম্মুর রান্নার স্বাদই আলাদা। আম্মু আমাকে খাওয়ার জন্য তাড়া দেয়।

আমি দ্রুত খেতে থাকি। শেষ পাতে ডাল নেওয়ার জন্য অগ্রসর হই।চোখ ঘড়ির দিকে রেখে বড় চামচ দিয়ে ডাল নিলাম প্লেটে। এক দলা ভাত মুখে পুড়ি।ভাত মুখে দেওয়ার পর দেখলাম ভিন্ন স্বাদ। কিন্তু চেনা খাবার। আম্মু কী লবন দিতে ভুলে গেলো!

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার এক দলা ভাত মুখে চালান করি। কিন্তু তখনও সেই একই স্বাদ। স্বাদের এমন বদল কেন !

চিন্তিত মুখে প্লেটের দিকে চোখ পড়ে। আমি তো ডালের বদলে ভুলক্রমে হালিম নিয়েছি ! ভাতের সাথে হালিম! স্বাদ তো বদল হবেই! আমার কান্ড দেখে আম্মু আর খালামণির সে কী হাসি!

আম্মুর কাছে শুনেছি ,আমার প্রপিতামহের (আম্মুর নানা) এক বিশেষ খাদ্যাভাস ছিলো। যেমন: প্রপিতামহ প্রায়ই খিচুড়ীর সাথে কলা কিংবা দুধের সাথে খিচুড়ী এভাবে খেতেন। আমি না হয় বংশানুক্রমিক ধারায় অজ্ঞাতসারে সেই খাদ্যাভাস পেয়েছি। সেটা একদিনের জন্যই হোক না কেন !

যাই হোক, ভাতের সাথে হালিমের স্বাদটা মন্দ নয়।

লেখাঃ সাবরিনা তাহসিন

 

 

Scroll to Top