হলুদ ক্যাবঃ গল্প

এই ব্যস্ত শহরে হলুদ ক্যাবে ঘুরে বেড়ানো মানে গরমে অসহ্য তেল চিপচিপে ভাব থেকে কিছুটা মুক্তি।
ছেলেবেলা থেকেই এসি গাড়িতে উঠলেই কেমন দমবন্ধ লাগে, অক্সিজেনের ঘাটতি হয় যে কারণে চারপাশটা চোখ বুলিয়ে নিতেও যেন গা গুলিয়ে আসে।

তবে আজ বেশ ভালো লাগছে, আকাশে জমাট বাধা কালো মেঘ, সাথে ফুরফুরে ঠাণ্ডা বাতাস দিচ্ছে।
হাওয়ার মাঝে চুলগুলো বারবার গুছিয়ে নেবার চিন্তায় অগোছালো হয়ে উঠছে।
খোলা জানালায় অর্ধেকটা মুখ বের করে আকাশ দেখা,
মাথার উপরে মাঝে মাঝে সশব্দে উড়ন্ত প্ল্যানটাকে দেখে মনে হচ্ছে আমারও দুটো পাখা আছে,
জীবনের ডানায় ভর করে আমিও আজ উড়ছি।

মহাখালী ফ্লাইওভারে এসে দেখি ছোট বড় গাড়ির বিশাল জটলা।
এ জায়গায় এলেই কেমন নস্টালজিক হয়ে যাই।
প্রথম অফিস, পুরনো বন্ধুরা, পুরনো রেললাইন, পুরনো গলি, পুরনো বাসা, পুরনো চায়ের দোকান,
পুরনো তুমি!
স্মৃতির আনাগোনায় সুখ দুঃখের পাল্লাটা খুব ভারী মনে হয়,
তাই নিজের অজান্তেই চোখে কখন জল আসে, নিঃশ্বাসের উঠা নামা বেড়ে যায়, ঠিক
বুঝে নিতে পারি না কখনই।
মাথার চুলগুলো এবার উপরে বেঁধে নিয়েছি,
প্রায়ই আমার চুল বাঁধা দেখলে, তুমি চিৎকার করে বলে উঠতে,
“এই চুল খুলে দে, খোলা চুলে তোকে বেশি সুন্দরী লাগে।”
আমিও বোকার মতো একগাল হেসে চুলগুলো খুলে দিতাম,
সত্যি! কি বোকা আমি।
এপাশ থেকে ওপাশে নাটাই আর সুতোর টানাটানিতে, কবে রঙিন ঘুড়িটা কেটে গিয়েছে …
তবুও আজ এই বেপরোয়া বাতাস কানেকানে কত কি যে বলে যাচ্ছে…।
গলিগলি ঘুরে অবশেষে বন্ধুর বাসাটা খুঁজে পাওয়া গেল,
পড়ন্ত বিকেলে মিষ্টি রোদে হাসিঠাট্টায় মশগুল আমরা দুজন।
যন্ত্রের শহরে নিজেকে লুকিয়ে রাখার জায়গার বড্ড অভাব,
তাই স্মৃতিগুলো সাথে নিয়ে সপ্তাহের একটি দিন একটু স্বস্তি।
বৃত্তের বাইরে এসে দেখা, আবার টুকরো টুকরো জমিয়ে রাখা ভালো লাগার গল্পে,
হাত বাড়িয়ে নিজেকে জড়িয়ে নেয়া।

Scroll to Top