একটি চিঠি

তোমাকে কি বলে সম্বোধন করবো ভেবে পাচ্ছি না, সামাজিক ভাবে আমরা এখন ও সুখি দম্পতির লেবাস নিয়ে আছি। আমাদের কাটানো দীর্ঘ ১৬ বছর মোটামুটি ভালোভাবেই গেছে,আমার মনে হয় না আমার দিক থেকে কোন রকম অবহেলা ছিল।
তোমাকে ভালোবাসি বলেই পারিনি সংসার ছেড়ে চলে যেতে, তুমি জানো, এখন ও আমি ব্যাগে ঘুমের ঔষধ ৪ পাতা নিয়ে ঘুরি জানিনা কখন খেয়ে ফেলবো। তোমার সেই দিনের কথা মনে আছে যেদিন তুমি অফিস থেকে অসময়ে ঘরে ফিরেছিলে? ঘর অন্ধকার করে চাদরে ঢেকে শুয়ে ছিলে? আমি বাচ্চাদের কোচিং থেকে ফিরে তোমাকে দেখে অস্থির হয়ে গেলাম কি হলো জানতে চাইলাম, তুমি বললে মাগরিবের নামাজ পড়ে আসো, বলবো কি হয়েছে। আমি নামাজে শুধু আল্লাহর কাছে কেদে কেদে তোমার জন্য দোয়া চাইলাম। তারপর যা শুনলাম তা কখন ও শুনতে চাইনি। তুমি বললে একটা মেয়ে ঘটিত ব্যাপারে কথা বলবো, মন দিয়ে শুনো আগে আমার কাছে এসে বসো, আমি ও যন্ত্রের মত পাশে গিয়ে বসলাম, বললে একজন খুব শিক্ষিত মহিলার সাথে তোমার সায়মন সেন্টার পরিচিত হয়েছে উনি খুব অসুখী হাসবেনড্ অশিক্ষিত আর প্রতিদিন মাতাল হয়ে মারধর করে, তোমার সাথে কথা বলতে বলতে বন্ধুত্ব আর তারপরে আরো গভীর হয়ে যায় লাসট ৭/৮ মাস ধরে সম্পর্ক চলছে, আমি আকাশ থেকে পড়লাম, কিভাবে কি হলো আমি কিছু টেরই পেলাম না। মহিলার হাসবেনড্ সব জেনে গেছে পরদিন তোমার সাথে মিটিং, সেখানে আমাকে নিয়ে যেতে বলেছে, না হলে তোমার অফিসে জানাবে, মেটামুটি বাধ্য হয়ে তুমি আমাকে বলেছো, আমি শুধু তোমার মুখের দিকে চেয়ে ছিলাম মানুষ কিভাবে এতো নীচ হয়, কিভাবে এতো খারাপ হয়? একবার ও তোমার ছেলে মেয়ে দুটোর কথা মনে হয়নি? একবার ও তোমার আমার কথা মনে পড়েনি? কোথায় তোমার কমিটমেনট কোথায় তোমার সততা? পুরো পরিবারে তোমাকে সবাই উদাহরণ টেনে ছেলেদের বলে তোমার মত হতে।
বিয়ের পর যখন তোমার জব চলে গেল আমি কতো কষ্টে সংসার টা টেনে নিয়েছিলাম, পেপারের সব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গুলো কেটে রাখা, সব ইনটারভিউ গুলোর সময় রোজা রাখা সব করেছি, বাচ্চাদের জন্য নিজে চাকরী করলাম না আজ জীবনের এই পরযায়ে এসে আমাকে এমন কিছুর মুখামুখি হতে হবে কখন ও ভাবিনি, যাক সেসব মন শক্ত করে পরদিন মিটিং এ গেলাম সারা রাত না ঘুমানোতে আর কান্না করাতে খুব বমি পাচ্ছিল,তাও মন শক্ত করে সব শুনলাম, তুমি কত বার মহিলার খালি বাসায় গেছ, প্রতিদিন অফিস শেষে তাকে নিয়ে ঘুরেছো, ইত্যাদি, ইত্যাদি । তুমি ক্ষমা চাইলে বললে কখন ও যোগাযোগ করবে না, মহিলা ও তার ছেলের কসম দিয়ে বললো আর কোনদিন তোমাকে নক করবে না।……. আসলে এসব কি আর মেটার করে আমাদের জীবনে? সরি বলে ই কি তুমি আবার আগের মত হয়ে যাবে? বাসায় কাউকে কিছু বললাম না, সব কিছু আগের মত চলছে তুমি অফিস নিয়ে ব্যস্ত, কখন ও কি লক্ষ্য করো তুমি আমি তোমার পাশে শুয়ে কান্না করে সারা রাত কাটিয়ে দিই? একটা কাজ শুধু করতে পেরেছি সেটা হলো সেইদিনের পর থেকে তোমাকে ছুয়ে দেখি না তুমি ও ভয়ে কাছে আসো না। শাস্তি টা তোমার জন্য অনেক কম কিন্ত বাবুরা যতদিন বড় হচছে না ততদিন আমি ও সংসার ছাডতে পারছি না। তুমি ভালো থাকো, জীবনে আমাকে অনেক ঠকিয়েছো, নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করো তোমার কি করা উচিত।। আমার এখন ও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এই তোমার সাথে আমার জীবনের সব চেয়ে ভালো সময় গুলো কাটিয়েছি। আসলে কি সব অভিনয় ছিল? তুমি কি কোন দিন আমাকে ভালোবেসেছিলে? না কি শুধু সন্তানের জন্য,আর পরিবারের জন্য আমার সাথে জীবন কাটাচছো? যদি ও এসব প্রশ্ন করা অবান্তর তবু ও মনে অনেক কথা জমে আছে শুধু বলতে পারছি না, এতো ঘৃনা জন্মে আছে মনে যে ইচছা ই করে না কথা বলতে।

( খুব কাছের একজনের জীবন থেকে নেয়া, গত ১ বছর মেয়েটির জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে, জানিনা কিভাবে সমাধান হবে)

 

 

 

 

 

Scroll to Top