এক দোলযাত্রা

সেদিন ছিল রঙ খেলার দিন। প্রতিদিনের মতো চক্রবর্তী বাড়ীতেও রঙ খেলার ধুম পড়েছে। স্বর্ণা ও জবা দুই বোনও বেশ আনন্দের সাথে রঙ খেলছিলো । সারা শরীরে রঙ মেখে একাকার। নানান রঙ ছড়িয়ে গেছে সবার শরীরে। কেউ রঙের আবির নিয়ে, কেউ বা পিচকারিতে রঙের পানি ভরে ছোটাছুটি করতে করতে একেকজনকে রঙ মাখামাখি করছে।জবার সারা শরীর রঙে, পানিতে একাকার হয়ে গেছে ।তাই জবা তার দিদিকে বললো, আমি একটু পুকুরে স্নান করতে যাচ্ছি।

স্বর্ণা বললো, আচ্ছা, ঠিক আছে। সাবধানে যাস। দেখিস, পুকুরঘাটটা একটু পিচ্ছিল।

জবা বললো, ঠিক আছে। চিন্তা করো না।

জবা পুকুরঘাটে এসে বসে আছে। সে মূলত সাঁতার জানতো না। ঘাটে বসে গায়ে পানি ঢেলে স্নান করতো। কিন্তু সেদিন পুকুরঘাট পিচ্ছিল থাকায় অসাবধানতা বশত সে পুকুরে পা পিছলে পড়ে যায়। সবাই দোলখেলায় মেতে উঠেছে। আর ঐদিকে জবা পুকুরে হাবুডুবু খাচ্ছে।

জবার আসতে দেরী হচ্ছে দেখে স্বর্ণা চিন্তিত হয়ে মাকে বলে, সেই যে পুকুরে স্নান করতে গেলো, এখনও তো এলো না জবা।

জবার মা প্রতিমা দেবী বিস্মিত হয়ে বলে, কী !জবা পুকুরঘাটে স্নান করতে গেছে! সে তো সাঁতার জানে না। তুই যেতে দিলি কেন ? তাছাড়া পুকুরঘাট বেশ পিচ্ছিল। এখন মেয়েটা কোথায় গেলো।

জবাকে খোঁজা শুরু হয়ে গেলো। ঘরেও খোঁজা হলো ।জবাকে কোথাও পাওয়া গেলো না ।পরে পুকুরঘাটে জবার সন্ধান করা গেলো।অবশেষে পুকুরঘাটে জবার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা গেল।

জবার মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছিলো না।

স্বর্ণা কাঁদতে কাঁদতে জবার উদ্দেশ্যে বলতে থাকে, কী কুলক্ষণে যে আমি তোকে পুকুরঘাটে স্নান করতে দিয়েছিলাম! তুই তাহলে আমাদের ছেড়ে এভাবে চলে যেতে পারতিস!

এরপর অনেক বছর কেটে যায়। জবার মৃত্যুশোক কেউ ভুলতে পারে নি। দোলযাত্রা প্রতি বছর আসে। কিন্তু চক্রবর্তী বাড়ীতে আনন্দের রঙ এখন বিষাদের রঙে রূপ পেয়েছে। এখন চক্রবর্তী বাড়ীতে কেউ রঙ খেলে না। জবার স্মরণে জবা ফুল পুকুরঘাটে ভাসিয়ে দেয়।

 

লেখাঃ সাবরিনা তাহসিন

Scroll to Top