আমাদের স্কুল সেদিন সনাতন ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে বন্ধ ছিলো। স্কুলটি দুই শিফটে বিভক্ত ছিলো। প্রভাতী শাখা (সকাল ৮.০০ টা থেকে বেলা ১১.০০ টা) ছিলো প্লে থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত। আর দিবা শাখা (বেলা ১১.০০ থেকে বিকেল ৪:৩০ টা ) ছিলো ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ ম শ্রেণী পর্যন্ত। দোলযাত্রার পরের দিন বেলা ১১:০০ টায় বাচ্চাদের ছুটি হয়েছে । আমি সেসময় স্কুলে গিয়ে উপস্থিত হই। তখন ৮ম শ্রেণীতে পড়তাম। দোতলায় ক্লাসরুমের দিকে যাওয়ার মুহূর্তে বাচ্চাদের হইচই শুনতে পাই । বাচ্চারা দোতলার ওয়াশরুম থেকে ভূত, ভূত বলে চিৎকার করছে।
আমি ক্লাসরুমে ঢুকি। আমাদের ক্লাসরুমের কয়েক কদম পরেই সেই ওয়াশরুম যেখান থেকে বাচ্চাদের চিৎকার ভেসে আসছিলো। ক্লাসরুমে আমার যতো সহপাঠী ছিলো সবার চোখে মুখে এক রকম ভয়, কৌতুহল লক্ষ্য করলাম। আমিও বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। তবে বিষয়টা এতোটা আমলে নেই নি।
সেদিন ক্লাসের সব পিরিয়ডের বিষয়বস্তুই ছিলো ওয়াশরুমে ভূতকেন্দ্রিক। সকল শিক্ষার্থীদের ভাব দেখে মনে হলো সবাই যেন একেক জন গোয়েন্দা!
আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবীদের মধ্যেও দেখলাম বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে। তারা আমাকে বললো, তুমি কী বিষয়টা বিশ্বাস করো? ওয়াশরুমে কী আসলেই ভূ-ভূ-ত আছে? আমি বললাম, বাচ্চারা অনেক সময় মজা করে কিছু বলে ফেলে। তাই বলে তাদের সব কথাই যে বিশ্বাস করতে হবে এমন কোন কথা নেই।
টিফিন পিরিয়ডের ঘন্টা পরলো। সেই সময় ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে । আমি ওয়াশরুমে যাওয়ার জম্য পা বাড়ালাম। ঐ মুহূর্তেই আমার কৌতুহলী বান্ধবীরা পথ আটকালো এবং ওয়াশরুমে যেতে নিষেধ করলো। আমি তাদেরকে বুঝালাম ওয়াশরুমে কোন ভূত নেই। কিন্তু কে শুনে কার কথা!
তারা যখন ভৌতিক আলোচনায় মত্ত, সেই ফাঁকে ক্লাসরুম থেকে চুপিসারে ওয়াশরুমে গেলাম। জরুরী প্রয়োজন শেষ করে ওয়াশরুমের দেয়ালে দেখলাম, লাল রং দিয়ে কাঁচা হাতে লেখা, আমি তোমাকে ছাড়বো না, আস্ত খেয়ে ফোলবো পাশে কাঁচা হাতের ছাপ।
আমি যে ওয়াশরুমে এটা তো আমার বান্ধবীরা জানতো না। তারা তখন নিশ্চয়ই ওয়াশরুমের বাইরে আড়িপেতে ছিলো। তো আমি ওয়াশরুমের দরজা খুলে যখন আমার হালকা পাতলা চিকন হাতটা বের করি তখন তারা সমস্বরে ভূ-ত বলে চিৎকার করে ওঠে। তাদের ভয়কে আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমি আমার দীঘল লম্বা চুলটাকে খুলে মুখের সামনে এনে ওয়াশরুম থেকে বের হই । আমাকে দেখে তারা ভয়ে পুরো পাথর। তার কিছুক্ষণ পর তারা দম ছেড়ে বললো, ও, প্রিয়ন্তু, তুমি ছিলে ওয়াশরুমে ছিলে! আমরা তো মনে করেছি ভূত!
আমি বললাম তোমরা সকাল থেকেই যেভাবে ভূত নিয়ে গবেষণা করছিলে তাই সবকিছুকেই তোমাদের ভূত বলে মনে হচ্ছে । হাত মুখ ধুয়ে টিফিন খেলাম। টিফিনের পর ২ টো ক্লাস শেষে ছুটি হলো।
পরের দিন স্কুলে ঐ ওয়াশরুমে ভূতের রহস্যফাঁস হলো।
আসলে দোলযাত্রার পরদিন প্লে ক্লাসের দুই শিক্ষার্থী দোলের রং আর আবির দিয়ে ওয়াশ রুমের দেওয়ালে ঐ ভয়ংকর কথাগুলো লেখে। এতোজনকে ভয় আর হেনস্তা করার জন্য শাস্তিস্বরূপ তাদের দুজনকে সারা ক্লাসে দাড় করিয়ে রাখা হয় ।
তারপর আমি আমার বান্ধবীদের হেসে জানালাম, বলেছিলাম না ভূত বলে কিছু নেই । মনের ভ্রম ছাড়া কিছুই না ।
তারা কিছু না বলে কেবল মাথা নাড়াল।
লেখাঃ সাবরিনা তাহসিন