পাকিজা

এ কোন মুখ? এতটা পরিবর্তন? এও কি সম্ভব? কোথায় সেই দীঘল লম্বা চুল! পত্রিকায় ছবিতে নামটা পড়তেই শুভর মাথাটা ঘুরে গেল। পাকিজা  খাতুন । দেশসেরা, ববকার্ট চুল, পায়ে হাইহিল, পরনে জিন্স সাথে টি শার্ট!

শুভর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে লাগলো। যদিও এসি চলছে। শুভর চোখটা আস্তে আস্তে বন্ধ  হয়ে এলো। এসির ভলিউমটা আরেকটু বাড়িয়ে দিলো। বেয়ারা চা নিয়ে আসতেই শুভ আস্তে করে বললো,  আজ আর লাঞ্চ দেওয়া লাগবে না।

-স্যার, শরীর খারাপ নাকি? আর বাড়ির খাবার না খেলে তো আপনার শরীর খারাপ করবে। শুভ বেশ জোরেই বললো, আমাকে একা থাকতে দাও।

শুভর মনে পড়লো, চিরকালই শুভ আল্ট্রা-মর্ডান স্টাইলে চলতে ফিরতে পছন্দ করে। ওর গার্লফ্রেন্ড নেইনাও ছিল ভীষণ আধুনিকা। মনে মনে ওরা দুজন দুজনকে ভবিষ্যতের সঙ্গী হিসাবে ভাবতো; কিন্তু বাঁধ সাধলো তার রাশভারি বাবা৷ যিনি প্রভাব  প্রতিপত্তিতে সোসাইটিতে বেশ পরিচিত। বাবার দাপটে কেউ উনার সামনে কথা বলার সাহস রাখে না।

বাবার জেদের কাছে হার মেনে শেষ পর্যন্ত মফস্বলের মেয়ে পাকিজাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। প্রিয় নেইনাকে বিয়ে করতে না পেরে শুভ তার বিয়ে নিয়ে সমস্ত রকম আগ্রহই বিসর্জন দিয়েছিলো। তবে মার কাছ থেকে শুনেছে মেয়েটা নাকি খুব মেধাবী আর সুন্দরী।

বাসর রাতে শুভ ঘরে ঢুকেই  দেখতে পেল মেয়েটা ঘোমটা দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। রাবিশ ! এক্কেবারে গ্রাম্য ভূত! একে নিয়ে কীভাবে সোসাইটিতে চলবে? উহ! বাবা এইভাবে তার জীবনটা নিয়ে ছিনিমিনি খেললো? নামেরও কি বলিহারি! পাকিজা! উহ! মাই গড!

এসিটা একটু জোরে দিলো শুভ। কিছুক্ষন পরে মেয়েটা বলে উঠলো, এসিটা যদি একটু আস্তে দেন?শুভ বিরক্ত নিয়ে  বললো, এ বিয়েতে আমার মত ছিল না, সে কি তুমি জানতে?

পাকিজা মাথা নিচু করে থাকলো। তারপর বললো, আমি আপনার যোগ্য হয়ে উঠবো। আপনি চিন্তা করবেন না। তাছাড়া বেশি আধুনিকা ভালো নয়। আগে মানুষের জ্ঞান চর্চা তারপর পোশাক-আশাক। আজকালকার মানুষ তো পোশাককেই আধুনিকার মাপে ফেলে। এটা ঠিক নয়।

এই মেয়ে শোনো, আমায় জ্ঞান দিতে হবে না। জ্ঞান দিয়ে সোসাইটি চলে না।

পাকিজা,  রিনরিনে কণ্ঠে বললো, কিন্তু তাই বলে স্বকীয়তা বাদ দিতে হবে?

শোনো মেয়ে, তুমি তোমার মতো থাক। আমি আমার মতো, বুঝেছো ? আমায় বিরক্ত করবে না।

পাকিজা হতবিহ্বল হয়ে গেল। মেয়েলি জীবনের সখ, স্বপ্ন সব এভাবে ঝরে যাবে? তাছাড়া এই রাত যে অনেক স্বপের। আচ্ছা, তাহলে কেনইবা বিয়েতে রাজি হলেন উনি? উনি তো বড্ড আধুনিক, উনি বিয়েটা ঠেকাতে পারলেন না? তবে তার সাথে কেন এহেন আচরণ?

পাকিজা উঠে ভারি শাড়িটা খুলে, বাক্স থেকে একটা তাতের শাড়ি বের করে পরলো। বাথরুমে যেয়ে দুফোঁটা চোখের জল ফেললো। ও বেশ বুঝতে পারলো তার এই সাজ দেখার আজ কেউ নেই।

তাই সাজসজ্জা সব খুলে গোসল সেরে ফ্রেশ হয়ে বেরুলো। একঢাল চুল মেলে ধরলো। ফ্যানের স্পিডটা বাড়িয়ে চুল শুকোতে লাগলো।

শুভ আরেকটা সিগারেট ধরার জন্য ঘরে এসেই দেখলো, পাকিজার একঢাল মাজা পেরুনো কালো চুল। ডিসগাস্টিং, গ্রাম্য কালচার। চেহারায় স্পষ্ট মফস্বলি ভাব আছে। বললো, ও পাশে হেয়ার ড্রাইয়ার আছে।

পাকিজা কোনো কথার উত্তর না দিয়ে মূর্তির মতো ফ্যানের তলায় দাঁড়িয়ে থাকলো।

সকালে উঠেই পাকিজা দেখলো, আটটা বাজে।

ওপাশে শুভ বেঘোরে ঘুম। পাকিজার খুবই ইচ্ছে হলো, শুভর মাথায় চুলগুলো  স্পর্শ করতে; কিন্তু স্পর্শময় রাতটাই যেখানে স্পর্শহীন রইলো, সেখানে?

ওর চোখের কোণায় চিকচিক করে উঠতেই, দ্রুতই নিজেকে সামলে নিলো। বাবার কথা মনে হলো। বাবা বলতেন কখনো ভেঙে পড়বে না। কারণ মানুষেরা সবসময়ই ভেঙে পড়া মানুষ দেখতেই পছন্দ করে।

পাকিজা ডাইনিং রুমে যেয়ে দেখতে পেলো শশুর মশাই বারান্দায় পেপার পড়ছেন। বয়স্ক একজনকে চায়ের ট্রে আনতে দেখেই- বললো, চাচা আমার কাছে দেন। এই বলে ট্রে-টা নিয়ে শশুরের সামনে ধরলো।

উনি সঙ্গে সঙ্গেই বললো, কি ব্যাপার রমিজ কই? তুমি এলে যে? বসো মা। পাকিজাকে বললো, মা তুমি আমার এই বাগানটাতে  একটু সময় দেবে। সাথে আমার শুভকেও। আমি এদের পরিবেশটা একটু চেঞ্জ করতে তোমাকে এনেছি। তুমি বুদ্ধিমতি, নিশ্চয়ই তুমি পারবে। কি বলো?

পাকিজা মৃদু হাসলো।

টুকটাক কথা বলতেই শাশুড়ী মা পরিপাটি হয়ে ওদের সাথে বসলো। বললো, বৌমা, তোমার নতুন পরিবেশে এসে নিশ্চয়ই ভালো লাগছে না। একটু সময় লাগবে। তবে তোমাকে একটু চেঞ্জ হতে হবে।

তোমার এই লম্বা চুল ম্যানেজ করাতো খুব সমস্যা। তা তোমার কি এই লম্বা চুল পছন্দ? শুভর আবার এত লম্বা চুল পছন্দ নয়। তুমি পারলে একটু ছোট কোরো কেমন?

পাকিজা শাশুমার দিকে তাকিয়ে শুধু বললো, লম্বা চুল আমার এবং আমার বাবার খুব পছন্দের। সৌন্দর্যতো শুধু শরীরে থাকে না, এটা মনেও থাকে।

শুভর বাবা বললো, বাহ! খুব সুন্দর কথা তো! খুবই ভালো। তিনি এক মনে চা পান করতে লাগলেন। শাশুড়ী মা বললো,

বৌমা, তুমিতো এখন আমাদের সোসাইটির অংশ, বাবার না, তাই না?

কি বলছেন মা? বাবা আমার জন্মদাতা, আমি চেষ্টা করলে কিছুটা হয়তো চেঞ্জ হতে পারি; কিন্তু শেকড় তো উপড়ানো ঠিক নয় , মা।

শুভর মা কিছুটা বিরক্ত নিয়েই উঠে গেলেন।

শুভর বাবা বললো,

তা বৌমা, বুঝলে কিছু? তোমাকে আমার ভারি পছন্দ হয়েছে। যাও এবার তোমার  ঘরে যাও।

পাকিজা ঘরে না গিয়ে বাগানের দিকে গেল।

তারতো এখানে কোন নিজের  ঘর নেই, যে ঘরে ভালবাসার মানুষ বাস করে না, সে ঘর কি  নিজের হয়? সে ঘরে কি বাস করা উচিত?

বাবার বাড়ি এদের বাড়ির কাছে কিছু ই না। পাকিজা সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। শেষমেশ একটা লাইব্রেরি রুম দেখে সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। যাক! তাও বাবা সময় কাটানো যাবে।

পাকিজা বই পড়ায় নিমগ্ন হয়ে গেলো।

এভাবেই শুভর অবহেলায় পাকিজার সাতটা দিন রঙহীন ভাবে কেটে গেল। সেদিন বোধহয় শুভর বন্ধুদের পার্টি ছিল। রাত বারোটায় পার্টি থেকে ফিরেই দেখতে পেল , পাকিজা বিছানায় ঘুমে। ওর নির্মল সৌন্দর্য, বিশেষ করে খোলা পিঠ আর খোলা পেট শুভকে আর বেঁধে রাখতে পারলো না ।শুভ আস্তে করে পাকিজার পাশে শুয়ে ওকে আদর করতে লাগলো। শরীর শরীরকে চায়। পাকিজাও নিজেকে বাঁধতে পারলো না। ও নিজেকে উজাড় করে দিল শুভর কাছে। প্রথম স্পর্শ পাকিজাকে মুগ্ধ করলো।

পাকিজা চাইলো আরও কিছুক্ষন জড়িয়ে  রাখতে; কিন্তু লাইটটা অন করতেই শুভ লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বললো, সরি ফর দ্যাট মোমেন্ট। আসলে আমি একটু ঘোরে ছিলাম। হুইচকিটা আজ একটু বেশিই হয়েছিলো।

ঘোর শব্দটা শুনেই পাকিজার মনের মুগ্ধতা একনিমিষে উধাও হয়ে গেল। শুধু বললো, তাহলে ঘোরে পড়ে তো আপনি একজন কাজের মেয়েকেও জড়িয়ে ধরতে পারেন? সঙ্গে সঙ্গেই  ঠাস করে একটা  চড় পাকিজার গালে পড়লো। বললো, গ্রামের ক্ষ্যাত কোথাকার! বেরিয়ে যাও এঘর থেকে।

পাকিজা কোনো উত্তর না দিয়ে লাইব্রেরি রুমে আসলো। চোখের কোণাটা চেপে ধরলো। না,না, চোখের জল নষ্ট করা যাবে না। বুকে পাথর বেঁধে মোবাইলে অ্যাপগুলো দ্রুত সার্চ করতে লাগলো। সিদ্ধান্ত যা নেবার সে তক্ষুনি নিয়ে নিলো। আর কত? এভাবে নির্লজ্জের মতোন? হঠাৎ একটা ভিডিওতে ওর চোখ আটকে গেল।

কিন্তু অনার্স তো এখনও শেষ হয়নি। সে একটার পর একটা ভিডিও দেখতে লাগলো। কখন যে রাত চারটে বাজলো ওর খেয়ালই নেই।

হঠাৎই শশুর সাহেব লাইব্রেরি রুমে উপস্থিত। বললেন-  কি ব্যাপার মা? এতরাতে তুমি এখানে কি করছো? তুমি ঘুমাওনি? উনি কিছু একটা নিরিখ করতে চাইলেন।

সঙ্গে সঙ্গেই পাকিজা বললো, কিছুই না বাবা, ওই বইটা মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়ছিলাম। উনি কিছু না বলে হেসে চলে গেলেন।

এরপর থেকে শুরু হলো পাকিজার লাইব্রেরিতে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটানো । ওকে যেন বইপড়ার নেশা উন্মত্ত করে দিয়েছে। শুভ ঘরে আসতেই পাকিজা বই হাতে নিয়ে লাইব্রেরিতে চলে যায়।

একদিন শুভর ভীষণ রাগ হলো। পাকিজা, পাকিজা, বলতে বলতে ছুটে এলো। ওর বই পড়া দেখে শুভর গা জ্বলে গেল। বললো,  শেষমেশ বাবা তাহলে একজন বিদ্যাসাগর এনেছে। তা ঘর কি আর করা লাগবে না? বইয়ে মুখ গুজে থাকলেই হবে?

পাকিজা শুধু মুখ তুলে বললো, আমার মত ক্ষ্যাত আর কোনো ঘরের ফাঁদে পড়তে চাই না। আপনি যান। পড়া শেষ হলেই ঘরে আসবো।

পাকিজা  মনে মনে বলল, আর তো মাত্র কটা দিন? পরের দিন সন্ধ্যায়, নীচে গাড়ীর হর্ন শুনে পাকিজা জানালায় চোখ রাখতেই দেখলো, একটা বুক খোলা ড্রেস পরিহিতা মেয়ে গাড়িতে বসে। এই তাহলে নেইনা! শুধু আধুনিকতায় মত্ত হলে কি চলে! শুভ ঘরে ঢুকতেই দ্রুতই পাকিজা সরে গেল। ওর সামনে দিয়েই শুভ গটগট করে চলে গেল। যাওয়ার সময় বললো, দেখো, স্মার্টনেস কাকে বলে? পাকিজা কিছুই বললো না। শুধু বললো, এভাবে স্ত্রীকে রেখে বাইরের মেয়েদের সাথে আনন্দ করা কি উচিত?

এই মেয়ে তোমার কাছে কি উচিত অনুচিত শিখতে হবে? পাকিজা শুধু শুনতে পেল, আনকালচার,  ব্রুট কোথাকার?

পরের মাসে ওর বাবা আসতেই, ঘরে যেয়ে; বাবার বুকে মাথা লুকালো। যেন কিছু একটা লুকিয়ে রাখার প্রয়াস। বাবা, ওর মুখটা ভালো করে দেখলো।  মাগো, দুঃখ বেদনা জীবনের অংশ। এটাকে টপকাতে  হয়। তুমি আমার মেয়ে। হেরে যেও না৷ আমি তোমার পাশে আছি।

এভাবেই পাকিজার লাইব্রেরিতে সময় কাটতে লাগলো। একদিন শাশুড়িমা বললো, বৌমা, তুমি কিন্তু শুভকে সময় দিচ্ছ না? পাগলা ঘোড়ার রাশ টেনে যে ধরতে হয় তাকি তুমি জানো না? তুমি শুধুই বই নিয়ে পড়ে আছো, তুমি বিদ্বান, কিন্তু, এটা কি ঠিক? স্বামীকে কাছে বেঁধে রাখতে হয়, তা না, তুমি আছো তোমার বই নিয়ে। আসলে আমাদেরই ভুল। বিড়বিড় করতে করতে উনি চলে গেলেন।

রাত তিনটায় বিছানায় যেতেই শুভ ওকে কাছে চাইলো। পাকিজার  ঘৃনায় মুখ কুচঁকে উঠলো। বলল, আমি কোনো রাস্তার মেয়ে নই।

আপনি অন্য পথ ধরতে পারেন। শুভর অপমানে লাগলো। বললো, তাহলে আর এখানে কেন, এখানে থাকতে হলে তোমাকে আমার মতো চলতে হবে।

পরের দিনই পাকিজা বাবার বাড়িতে চলে গেল। সাত দিনের জায়গায় একমাস কেটে গেল। শুভ আনতে গেলে পাকিজা বললো, সে আর ও বাড়িতে যাবে না। এ কথা শুনে শুভর ঠোঁটের কোণায় বিদ্রুপের হাসি ফুটে উঠলো। শুভ বললো, আমি জানিতো তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে, তাই না? তা না হলে লাইব্রেরিতে তোমার সারারাত দিন ফোনে কথা বলা সবাই শুনেছে। তুমি ভাবছো কেউ বুঝেনি?  ভালোই হলো। যাক। পাকিজা শুধু বললো, আবার হয়তো দেখা হবে। শুভ বিরস মুখে ফিরে গেল।

শুভর বাবা এরপর পাকিজার কাছে ফোন দিতেই পাকিজা বললো, বাবা, আপনার চেষ্টার সাথে আমিও চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আই অ্যাম সরি বাবা। অতি আধুনিকতার ভার যে আমি আর সইতে পারছি না। আপনি ভালো থাকবেন। এই বলে পাকিজা ফোনটা রেখে দিলো।

এদিকে বাবা মেয়ের দিন রাত্রির লেখাপড়া চলছে। পাকিজা শেষমেশ দুটো কোর্স কমপ্লিট করলো একটা ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ আর আর একটা ফ্যাশনের উপর। পাকিজার মনে পড়লো শশুরবাড়িতে লাইব্রেরিতে ও ইউটিউবে ফ্যাশন আর ইংলিশ প্রাক্টিস করতো। ফ্যাশন ডিজাইনার মাহিনের রুচিসম্মত স্টাইল ওকে মুগ্ধ করতো।

শুধু লোকজন দেখলেই বইখুলে বসে থাকতো। কাউকে কিছু বুঝতে দেয় নি।

মা বললো, মাগো, জামাইকে ফিরিয়ে দিলি? তোরা বাপবেটিতে কি লাগিয়েছিস বলতো? পাকিজা মার গলা ধরে বললো, মাগো, তোমার ক্ষ্যাত মেয়েটা একটু স্মার্ট হচ্ছে। মা, বললো , স্বামী ছাড়াকে তোরা স্মার্টনেস বলছিস? এটা কোন শিক্ষা? সব ওই লোকটার জন্য। কতবার বলেছি মেয়েদের এতটা স্বাধীনতা দিও না। এখন বুঝুক?

ওদিকে আরও ছ’মাস পেরিয়ে গেল। শুভও কিছুটা স্তিমিত এখন। কারণ নেইনার অতি আধুনিকতার বেল্লালাপনায় শুভ খুবই বিরক্ত। সেদিন যখন ওরই সামনে নেইনা ওর বন্ধু রাহির গলা জড়িয়ে ধরলো, তখন আর শুভ নিজেকে বশে রাখতে পারলো না। এটা নেইনাকে বলতেই নেইনা ফুঁসে উঠলো। বললো, তোমার মতো আনকালচার ম্যান আমার জীবনে দরকার নেই। তোমার এত্তবড় সাহস, তুমি আমায় চার্জ করছো?

শুভ আর কথা বাড়ায়নি। ঘরে ফিরে এসেছে। ওর পাকিজার কথা মনে পড়লো। ফোন দিলো। বললো, আমি তোমাকে চাই। ওপাশে নিশ্চুপ। ফোনের লাইনটা কেটে গেল বোধহয়!

রমিজ, এসি ঘরের দরজাটা টান দিতেই ক্যাচ করে শব্দ হলো। শুভ চোখ মেলতেই বলল, ছোট সাহেব অফিসের সময় যে হলো। যাবেন না? শুভ বললো, মা কোথায়? রমিজ বললো, মহিলা সমিতির সেমিনারে।

শুভ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ও বড্ড একাকী বোধ করে আজকাল।  রমিজের ডাকে বলল, এইতো যাবো। ড্রাইভারকে রেডি হতে বলো।

ব্রেক টাইমে আবারও শুভ পাকিজার কাছে ফোন দিলো, বললো, আই অ্যাম সরি, পাকিজা।
ওপাশে চুপ থেকে বললো, বাই দ্যা ওয়ে, আপনি আমাকে পাকিজা বলবেন না। আমাকে ম্যাডাম পাকিজা বলবেন।

পরের সপ্তাহে শুভ ডিভোর্স ফাইল পেলো।
কারণ দেখালো, প্রবলেম অফ এ্যাডজাস্টমেন্ট। আরও কিছু শাস্তি পাকিজা শুভকে দিতে পারতো; কিন্তু ওরা সেটা করলো না। প্রয়োজন বোধ করল না।

পাকিজা এখন ওর ডিজাইন আর মাস্টার্স পরবর্তী এমবিএ কোর্স  নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। যেদিন ও শ্রেষ্ঠ ফ্যাশন ডিজাইনারের পুরস্কার নিলো। সেদিন মঞ্চে তার চুলের কথা জিজ্ঞেস করতেই সে বললো যে ওর চুল সে একটা ক্যান্সার ফাউন্ডেশনে দান করতে চায়। চারিদিকে হাততালির রোল পড়ে গেল। সবাই ওকে এপ্রিশিয়েট করলো। খুশিতে পাকিজার সমস্ত দুঃখ,কষ্ট দূর হয়ে গেল।
এরপরই একটা ডিজাইন গ্রাফিকসের প্রতিষ্ঠান ওকে চিফ এসিস্টেন্ট ডিজাইনার পদে দায়িত্ব দিয়েছে। জীবনটা বড়ই ছোট্ট। ছোট খাটো দুঃখ বেদনা এসবকে আঁকড়ে না ধরে, জীবনকে আঁকড়ে ধরে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কথাগুলো বলে পাকিজা সাংবাদিকদের আর কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উঠে পড়লো। বললো, আমাকে যেতে হবে বহুদূর।

Scroll to Top