প্রকৃতির কথা

প্রকৃতির সাথে মানবমনের সম্পর্ক থাকে। প্রকৃতির লীলাখেলা এমনই। মানবমনের সাথে যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই প্রাকৃতিক সান্নিধ্যের ঐক্যতান তৈরী হয়। সেদিনও ছিলো বর্ষণমুখর একটা দিন। দিনভর চলে মুষলধারে বৃষ্টি। তবুও বাদলা দিনে মানুষের কাজ থেমে থাকে না। বৃষ্টিভেজা দিনেও চলে কর্মব্যস্থ মানুষের কর্মচাঞ্চল্য। বাসার সবাই নিজ নিজ কর্মে বাহিরে গেছে। আমিও স্কুলে গেলাম, মা-বাবাও নিজ নিজ কর্মস্থলে। বাদলা দিন হওয়ার কারণে স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গিয়েছিলো। তাই ছাতা মাথায় করে বাসায় ফিরে আসতে হলো। দিনভর মুষলধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতির চঞ্চলতার মাঝে কেমন যেন শূন্যতা ! এই নির্জনতায় বাসায় আমি একাকী ।এমন বর্ষণমুখর দিনেও মনে একরকম বিষণ্ণভাব। সেই সময় তো মোবাইল ফোনের প্রচলন হয় নি যে, কারও সাথে ফোন করে কথা বলি। টেলিফোনের চল ছিলো বটে, কিন্তু সবার ঘরে তো আর ল্যান্ডলাইন রাখা সম্ভব হতো না। যাই হোক, বসে আছি একাকী শূন্যতায়। কোনো কিছুতেই যেন মন বসছে না। যদি কেউ থাকতো আমার সাথে ! মনের ভিতর জমে থাকা অনেক কথা যেন এক নিবিড় মাদকতায় বের হয়ে আসতে চায়।

বিছানায় পরে থাকা কাপড়ের পুতুলটাকে হাতে তুলে নিলাম। পুতুল তো আর কথা বলতে পারে না। কী কথা কইবো তার সাথে ! পুতুল তো আর কথা বলতে পারে না ! নিঃসঙ্গতা যেন গ্রাস করে মুহূর্তে। হারিয়ে গেলাম ভাবনার রাজ্যে। হঠাৎ কানে ভেসে এলো উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি। সম্বিত ফিরে পেলাম। উলুধ্বনির আওয়াজ বাদলধারার রিমঝিম কলতানকেও যেন ছাড়িয়ে গেলো। উলুধ্বনির সাথে বৃষ্টির ছন্দে যেন মধুর ঐক্যতান তৈরী হলো।পাশের হিন্দু প্রতিবেশীর বাড়ীতে নিশ্চয়ই কোনো মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান পর্ব শুরু হয়েছে। জানালার কোল ঘেঁষে পাঁচিলটা কিঞ্চিৎ উঁচুতে ।

নাগাল পাওয়া গেলো না। তবুও মোড়ার উপর দাড়িয়ে খানিক দেখার চেষ্টা। দেখা গেলো, টিনের চালের নীচে এক পাশে বর-কনে দাঁড়িয়ে আর অন্য পাশে এক বৃদ্ধ মহিলা বরণডালা নিয়ে বর-কনেকে বরণ করছে। কনে দুধে- আলতা থালায় পা ভিজিয়ে ঘরে প্রবেশ করছে। সঙ্গে বাজলো উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনি। উলু ও শঙ্খধ্বনির সাথে বৃষ্টির নৃত্য মিলে পুরো ব্যাপারটা বেশ জমজমাট। আর এর মধ্য দিয়েই হিন্দু বাড়ীর বৈবাহিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো। দেখতে দেখতে কীভাবে যে সময় কেটে গেলো টেরই পেলাম না। বেলা গড়িয়ে বিকেল হলো। দরজায় নক। আম্মু কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরলো। মুষলধারে সারাদিন বৃষ্টি হওয়ার কারণে আম্মুর বাসায় ফিরতে দেরী হলো।সে যাই হোক, বর্ষণমুখর দিনের শুরুটা নিঃসঙ্গতা শূন্যতার মধ্য দিয়ে কাটলেও দিনের শেষটা এক প্রাণচঞ্চল আনুষ্ঠানিক পর্বের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হলো।

 

লেখাঃ সাবরিনা তাহসিন

Scroll to Top