পরাধীন স্বাধীনতা

জানালা খুললেই আর্তনাদ, আহাজারি- টিয়ারশেলের গন্ধ। টিভি খুললেই তথ্যরা সব মেঘাচ্ছন্ন। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা কষ্ট। মধ্য জুলাইয়ের এ তাণ্ডব ভেতরটাকে ফের পুরিয়ে চলেছে। তারই সঙ্গে কেনো জানি আবারও ফিরে ফিরে আসছে আমাদের পুরনো দিনের স্মৃতি।

মাঝে মাঝেই নিজের অজান্তেই উল্টে পালটে দেখছি পুরনো সেই ডায়েরি আর ঝলসে যাওয়া সেই ছবিটা। যতোবার ওসব ছুঁয়ে দেই, ছুঁতে ছুঁতেই মনে হয়, এতোকিছুর পরও কেন আর এসব! যেখানে আমি নিজেই জানি না আমি আর ঘরে ফিরবো কীনা, তা কি সম্ভব হবে কীনা; প্রতিদিন রাতে ভাবতে থাকি নতুন সকাল না জানি কোন দুঃসংবাদ বয়ে আনবে। এসব ভেবে ভেবে যখন আমার রাত ফুরোয় না তখনও কেনো তার ভাবনা আমাকে ছুটি দেয় না!

অথচ আমি এখনো সেই ব্যথায় জর্জরিত সকাল, দুপুর সন্ধ্যা, রাতও মগজে গেথে রেখেছি। তারপরও আমার এই ভয়ংকর অনিরাপত্তায় আমি কেনো বারবার তার নিরাপত্তার দোয়া চাইছি! তাই বলে ভাববেন না আমি ওদিকের খবর কিছু জানি না। ওদিকটা কিন্তু বেশ চলে যাচ্ছে।  আমার জন্য আর কিচ্ছু নেই সে সম্পর্কেও আমি অনেক আগে থেকেই ওয়াকিবহাল। তবে এতো অশান্তির মধ্যেও ওদিকে বোধহয় আলাদা ব্যক্তির সান্নিধ্যে আলাদা শান্তি বিরাজমান।

তারপরও নিজেকে অবুঝের মতো প্রশ্ন করি, ওদিকটায় কি টিয়ারশেল, গুলির আওয়াজ যায় না? সেই আওয়াজ কি আমার গন্ধ ভাসিয়ে নিতে পারে না? হয়তো ওপাশে সমস্ত কিছুই যায় তবে তারা সঙ্গে করে আমার গন্ধ নিতে পারে না। কারণ ওদিকে কেউ আমার কথা ভুল করেও ভাবে না। আমি তার শুদ্ধতায় তো নেই–ই, তার ভুলও আর আমাকে ধারণ করে না। ওদিকে ভুল করেও আর আমার নামটি উচ্চারিত হয় না।

আর যদি উচ্চারণ করার এ ভুল কখনো হয়েও যায় তবুও তার কিচ্ছু এসে যায় না। তাহলে আমার দিকটা এমন শোকে আচ্ছন্ন কেন? কেন এই স্তব্ধতা? যখনই ওরা টিয়ারশেল মারে, গরম পানি, রাবার বুলেট ছোড়ে তখনই কেন বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে। মনে হতে থাকে, এবারেরটা তার জন্য না তো! আমি এভাবেই বন্দি হয়ে আছি, নিজের কাছে নিজে নয়তো ভালোবাসার কাছে।

আমি বৃত্তের ভেতরে আটকে আছি নাকি আমি নিজেই এখান থেকে বের হতে চাচ্ছি না জানি না! আচ্ছা, ভালোবাসা কি তবে পরাধীনতা? নাকি এটা ব্যক্তি হিসেবে আমার স্বাধীনতা? অন্যের অনুভূতি কিংবা অবস্থানের পরোয়া না করে নিজের মতো ভালোবেসে যাওয়াটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত স্বাধীনতা নয়তো কী! হ্যাঁ হ্যাঁ, এ আমার স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতাই আমার বেঁচে থাকার ভালোবাসা। সব কেড়ে নিলেও এটা কেউ নিতে পারবে না। কোনো ফ্যাসিবাদী আমার এ স্বাধীনতা ছুঁতেও পারবে না। আর এটাই আমার বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। যে অনুপ্রেরণায় আমি জয় করবো আমার সকল পরাধীনতা।

লেখাঃ রোকসানা আরশি

Scroll to Top