দীর্ঘ চল্লিশটি বছর পেরিয়ে গেলেও
স্মৃতির এ্যালবামের রং হয়নি ফ্যাকাসে এখনও ,
প্রথম সাক্ষাৎ যেন কবে? মনে আছে?
ওই সেই পূজোর প্যান্ডেলে
ভাবিনি তো বাঁধবে আমায়
জন্ম-জন্মান্তরের বন্ধনে এমনি করে ।
সবে মাত্র কলেজ দ্বিতীয় বর্ষে
পুজোর ছুটিতে আসা, পিসির বাড়িতে ।
আর তুমি ? ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তৃতীয় বর্ষে
ওই এলাকাতেই বসবাস তোমার ।
বিকেলে হৈ হৈ করে বেড়ূলাম সবাই
এক ঠাকুর থেকে আর এক ঠাকুর
এ প্যান্ডেল থেকে সে প্যান্ডেলেতে ।
গভীর মননে পুজো দিয়ে , ঠাকুরের চরণে ,
প্রসাদ হাতে ফিরে দেখি, তুমি দাঁড়িয়ে ,
ভিড়ের মাঝে , ঠিক আমার সম্মুখে ।
প্যান্ডেলের আলোর ঝলকানি , ঢাকের আওয়াজ,
উলুর ধ্বনি, পুরোহিতের ঘণ্টার শব্দ
সব যেন , থেমে গিয়েছিল ,
শুধু সেই একটি ক্ষণে ।
দু জোড়া নয়ন, দুটি মন ছুঁয়ে,
দু জোড়া হাত যে মেলাবে এক সাথে
ভেবেছিলাম কি সেদিন, দুজনে ?
তারপর দূর আলাপনীর কিছু সংখ্যা বিনিময় ,
চুপি চুপি কিছু তরঙ্গে আলাপন
মন্দির, পাঠাগার বা বন্ধুর বাড়ীর ছুঁতোয়
সঙ্গোপনে দুজনের একটু দর্শন ,
বাড়ীতে না জানানোর ভয়
তোমার একটা ভালো চাকরির অপেক্ষায় থাকা
আর লাল নীল কতো স্বপ্ন আঁকা ।
কিন্তু হঠাৎ একদিন , একি হলো !
জেনে গেল সবাই সব কিছুই
যারা ছিল , তোমার আমার বাটী
মানতে চাইলো না কেউই , কারন ?
আমি যে বাঙ্গাল, আর তুমি ঘটি ।
সব বাঁধা পেড়িয়ে , সবার মন জুগিয়ে ,
সিঁথিতে তোমার নামের সিঁদুর
হাতে শাঁখা পলা, গলায় মঙ্গল সূত্র পরিহিত
লক্ষ্মীর হাড়ী ঠেলে , গৃহ প্রবেশ করালে
তুমি , তোমার স্বপ্নজয়ী এই বঁধুর ।
জীবনের যত আনন্দ , সফলতা , প্রতিকুলতা
সব ডিঙ্গিয়ে , যখন জিবনের শেষ প্রান্তে,
ঝড়া পাতার মত , তুমি হারিয়ে গেলে
ভরা সংসারে আজ সবাই ব্যস্ত
করতে তাদের লাল নীল স্বপ্ন পূরণ ।
এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে ,
মনভোলানোর যে কতো আয়োজন ,
ফেইস বূক , হোয়াটস আপ ,
মেসেঞ্জার গ্রুপের মেলায়
কি যে ঝড়ো আলাপ
সব শিখিয়েছো তুমি আমায় ।
আজ আমার সিঁথীতে নেই সিঁদুর ,
নেই শাঁখা পলাও ,
নেই তোমার মঙ্গল কামনায় সূত্র ,
এতো মেকী মেলার মাঝে ,
তোমার ছবিতে মালা চড়িয়ে ,
দিন কাটে তোমার সাথে
একা বক বক করে , তোমার এই বঁধুর ।
তুমি শুনছো ? কই বলছো নাতো ?
আ – হা ! একটু থামো না ,
এত বোকছো কেন বলতো ?
ঝড়া পাতার মতো ভালোবাসা ,
কেন ঝড়ে য়ায়না ? বলতে পারো ?
প্রবাহমান নদীর মতো ভালোবাসা
দ্রুত বয়ে যেতে চায় কেন ?
সমুদ্রে মিলিত হওয়ার ব্যাকুলতায় ।
লেখাঃ জুলিয়ানা জেসমিন বনি