মেঘবালিকা

শরতের শিশির ভেজা সকাল, বিন্দুবিন্দু জমা শিশির ঘাসের উপর অন্যরকম এক অনুভূতি সৃষ্টি করে। সাদা মেঘের ভেলা, নদীর ধারে ফুটে থাকা কাশফুল, স্নিগ্ধ  আবহাওয়া মনকে চঞ্চল করে তোলে । মন ছুটে চলে যেতে চায় মেঘের পানে, অজানার উদ্দেশ্যে।
ছোট্ট মেয়ে মেঘা। দেখতে একদম পরীর মত। মনে হয় যেন এক্ষুনি পরীর ডানায় করে মেঘের দেশে চলে যাবে। মেঘেরা তাকে সানন্দে গ্রহন করবে তাদের মেঘবালিকা হিসেবে। মেঘের মেয়েরা ঠিক দেখতে তারই মত সুন্দর। সে সকল সুন্দরের ঊর্ধ্বে।
মেঘা দেখতেও যেমন সুন্দর, তার গুনও আছে অনেক। সে পড়াশুনায় অনেক ভালো।  ক্লাসে সব সময় প্রথম হয়। একবার কি হয়েছিলো সে প্রথম না  হয়ে  দ্বিতীয় হওয়ায় অনেক কান্না শুরু করে দিয়েছিলো । দুইদিন ধরে খাওয়া- দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলো। ওই বারের পর আর সে কখনও দ্বিতীয় হয়নি। সে এবার ক্লাস থ্রি থেকে ক্লাস ফোরে  উঠবে।
-মেঘা তুমি এবার প্রথম হতে পারবে তো?
জি স্যার, অবশ্যই পারবো।
তোমার জন্য অনেক দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
ধন্যবাদ স্যার।
স্কুল শেষে বাসায় ফেরার পর  মেঘা চুপচাপ বসে আছে। হয়ত সে তার স্যারের বলা কথাগুলো ভাবছে। একসময় ঘরের মধ্যে তাঁর মা চলে আসলো, সে তখনও অনেক কিছু ভেবে যাচ্ছে।
-মেঘা কি হয়েছে? এমন চুপটি মেরে বসে কি ভাবছিস?
না, মা তেমন কিছু না।
মাকে বলবি না কি হয়েছে?
এবার আমি প্রথম হতে পারবো কি না তাই ভাবছি
তুই তো সব সময় প্রথম হয়ে থাকিস। এবারও তাই হবি।
তাই যেন হয়, মা। আমি সব সময় এই প্রথম হতে চাই।
তুই এত চিন্তা করিস না। যা হবে ভালোর জন্যই হবে।
আচ্ছা মা, তুমি আমার জন্য অনেক অনেক দোয়া করিও। আর এইভাবেই সব  সময় পাশে থেকো।
সন্তানদের জন্য মায়ের দোয়া সব সময় থাকে । মায়েরা হয় সন্তানদের সকল ভালো- খারাপের সাথী।
বিকেলবেলা মেঘা বারান্দায় বসে গল্পের বই পড়ছে, বইয়ের মধ্যে সে প্রথম রুপকথার গল্প দেখলো। সে অবাক হয়ে চেয়ে আছে বইয়ের দিকে। একসময় মনে হলো সে নিজেই রুপকথার একটা পরী।  শুধু পরীদের মত তার একটা ডানা তার নেই।

মেঘা এখন কল্পনার জগতে বিরাজ করছে। কল্পতরু তাকে কল্পনার মায়াভরে উড়ায় নিয়ে যাবে এক অজানা পৃথিবীতে। সে পৃথিবীতে সে ছাড়া আর কেউ নেই। 
মেঘা এখন নতুন ভাবনার জগতের মেঘেদের রানী মেঘমালা। মেঘের উপরেই তার বাড়ি। সে থাকে মেঘের মালার  মধ্যে ভেসে, মেঘের মাঝেই তার বসবাস, মেঘেরা তার অনেক আপনজন।  এখানে মেঘ ছাড়াও তার আরও অনেক বান্ধুবী আছে, তারা একেকজন একটা করে পরী, কেউ ফুল পরী, মেঘ পরী, লাল পরী, নীল পরী, মেঘবতী, আরও অনেক নাম না জানা পরী। এদের সাথে ভালোই দিন কাটছিলো মেঘার। সে তার পরিবারের কথা ভুলে গেলো। এই নতুন ঠিকানায় সে নিজেকে মানায় নিয়েছে। 


একদিন একটা পরী সবাইকে  বললো, চলো আমরা সবাই  মিলে পৃথিবীতে যাই।
মেঘমালা মেঘা বললো, পৃথিবীতে  আমাদের কাজ কি? সেখানে গিয়ে আমরা কি করবো?
আমরা মানুষদের উপকার করবো, তাদের বিপদের হাত থেকে রক্ষা করবো, তাদের ভালো-মন্দ দেখবো।
এগুলো করে আমরা কি করবো? এতে আমাদের কি লাভ?

আমাদের জন্য কিছু মানুষের ভালো হবে, আমরা চাইলে যে কাজগুলো করতে পারি সেগুলো করে তাদের উপকার করবো।
মেঘমালা মেঘা বললো, তাহলে আমরা সবাই মিলে যাবো। যাদের অনেক কষ্ট তাদের সকল কষ্ট আমরা দূর করে আসবো।

মেঘমালা মেঘার কথায় সকলে সম্মতি দিলো৷
কিছুদিন পর সকল পরী, মেঘের রানী মেঘমালা মিলে পৃথিবীতে গেলো। তারা সবাই অবাক হয়ে পৃথিবীর মানুষ, গাছপালা, পশু-পাখি, নানান রকম ফুল, গাছের হরেক রকম ফল, কৃত্রিম বাসস্থান দেখতে লাগলো।
তাদের কাছে পৃথিবী অনেক সুন্দর স্থান বলে মনে হলো।
তারা ঠিক করলো মানুষ সেজে তাদের সাথে মিশে থাকবে। কিন্তু তারা তো পরী কিভাবে মানুষদের সাথে থাকবে। আগে তাদেরকে মানুষদের মতো সাজতে হবে।
-মেঘের রানীর কথা মতো তারা কিছুদিনের জন্য মানুষ  হয়ে গেলো। তারা কিছুদিন এখানেই থাকবে।
বেশ কিছুদিন কেটে গেলো,
পরীদের নিজের রাজ্যে ফিরে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। এরমধ্যে পরীরা পৃথিবীর মানুষদের অনেক উপকার করেছে। মেঘার এই পৃথিবীর কথা কিছুই মনে নাই। সে যে সত্যি একদিন এখানে বাস করতো, এখানেই তার পরিবার আছে।
ওইদিকে মেঘার বাবা-মা তাদের মেয়েকে না পেয়ে পাগলপ্রায়। মেঘা পৃথিবীতে এসেও তাদের চিনতে পারলো না।
মেঘারা আবারও পরী হয়ে তাদের সাথে মেঘের রাজ্যে চলে গেলো। সেখানে গিয়ে মেঘেদের রানী হয়ে থাকতে শুরু করলো।
কল্পনার এই পর্যায়ে মেঘা বাস্তবতায় ফিরে এলো, সে অনেক খুশী হলো সে আসলে পৃথিবীতেই আছে, তার মা-বাবার কাছে। এই আন্দের আর কোনো সীমা হয় না মেঘার কাছে।

লেখাঃ নুশরাত জাহান মহিমা 

মিরপুর, ঢাকা

Scroll to Top