আমার একমাত্র নেশা হচ্ছে গল্পের বই পড়া, ছোট থেকেই এই অভ্যাস তৈরী হয়েছিলো, এই নেশার কৃতিত্ব আমার সাহিত্যিক ও অধ্যাপক বাবা শ্রদ্ধেয় মরহুম আ. ন.ম. বজলুর রশীদ, তিনি আমাকে ছোট থাকতেই অসংখ্য শিশু সাহিত্যর ভালো ভালো বই এনে দিতেন, অনেক পড়েছি, কত বিখ্যাত সব লেখকের বই যে পড়েছি, বলে শেষ করতে পারবো না। বিশ্বকবি, জাতীয় কবি, শরৎ সাহিত্য, বঙ্কিম রচনাবলী, ওনাদের লেখা সবই পড়া হয়েছে, বলাই বাহুল্য যে আব্বার লেখা বইও, তিনি বই এনে দিতেন ঠিকই কিন্তু পরীক্ষার সময় বারণ করতেন গল্পের বই পড়তে।
আব্বা কখনো ওনার সন্তানদের মারেননি বা বকাও দেননি তথাপি ভয় পেতাম এবং ওনার আদেশ অমান্য করার কথা ভাবতেও পারতাম না। আত্মীয়স্বজন বন্ধু বান্ধব যে যেখানেই থাকুক, তাদের কাছে থেকেও বই আনতাম, আগে তো উপহার হিসাবে বইও দেবার প্রচলন ছিলো, সুতরাং বক রাক্ষসের ক্ষুধা ঐ রাক্ষসের পদ্ধতিতেই মেটাতাম অর্থাৎ সবার কাছে থেকেই বই এনে পড়তাম, তো পরীক্ষার সময় কোনো বই পেলেই জমিয়ে রাখতাম, শেষ পরীক্ষা দিয়ে এসে আর তর সইতো না, কোনো মতে নাওয়া খাওয়া সেরেই বই নিয়ে মগ্ন হয়ে যেতাম।
মোটাসোটা পূজা বার্ষিকী, ঠাকুরমার ঝুলি ইত্যাদি বইগুলো পড়ে কি যে ভালো লাগতো, যত বড় হতে লাগলাম ততই অনন্য এক অমূল্য জগতের সন্ধান পেতে লাগলাম।
আব্বা একবার ময়ূরপঙ্খী নামে ইয়া মোটকু এক শিশু সাহিত্যের বই এনে দিলেন, বইটা বাংলাদেশ থেকে পাবলিশ করা হয়েছিলো। অনেক মজার মজার গল্প ছিলো, পড়ে এত মুগ্ধ হয়ে গেলাম,
আমার সংগ্রহের অন্যতম প্রিয় বই ছিলো ওটা।
দুর্ভাগ্যবশত বইটা আমি হারিয়ে ফেলি, আর কিছুতেই পেলাম না, খুব কষ্ট পেয়েছিলাম, অনেক দিন পরে অনলাইনে বইটা বিক্রি হতে দেখলাম কিন্তু আমি নেবার আগেই ওটা বিক্রি হয়ে গেলো, পেয়েও একটুর জন্য আবার হারিয়ে ফেললাম প্রিয় বইটা। কি করি? হঠাৎ বুদ্ধি হলো, ফেসবুকে এই মর্মে লিখে পোষ্ট করলাম; ময়ূরপঙ্খী বইটার সন্ধান যদি কেউ দিতে পারেন, আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।
এই দুর্লভ বইটা আমাকে পেতেই হবে, আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম কিন্তু সৌভাগ্য আমার যে একজন সহ্নদয় মানুষ বইটা পুনরায় পেতে সাহায্য করলো অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম। অবশেষে পেলাম সেই সোনার খনি, যেদিন বইটা হাতে পেলাম; বুকে জড়িয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলাম। সেই আনন্দ আমি ভাষায় বর্ণনা করতে পারবো না। গাড়ি নয় বাড়ি নয়, সুস্বাদু কোনো খাবারও নয়; শ্রেফ একটা বই, যেটা পেয়ে কিনা আমি স্বর্গীয় তৃপ্তি লাভ করেছিলাম, আমি এখনো বই পড়ি, এবং আমি লিখতে পারছি, প্রচুর বই পড়ার চর্চা থাকায়, অভিজ্ঞতা, পরিশ্রম আর চেষ্টা দিয়ে আমি আজ সফল। অবশ্যই আব্বার সহযোগিতা আমাকে লেখার জগতে কৃতকার্য হতে সাহায্য করেছে।।
লেখাঃ নাজনীন রহমান