শৈশবের ঈদ আনন্দ

মনোয়ার সাহেব ঈদের ছুটিতে বউ-বাচ্চা নিয়ে গ্রামে এসেছেন। ছুটি মাত্র পাঁচদিন। এই অল্প কয়েকদিন সকলের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে আবার ফিয়ে যেতে হবে একঘেয়েমি শহুরে জীবনে৷ তিনি একমনে বসে ছোট্ট বেলার ঈদের কথা ভাবছেন। এমন সময় তার ছোট মেয়ে মৃদুলা ঘরে এসে বলছে, বাবা তুমি কী করছো?
-তেমন কিছু না মা, এমনি ভাবছিলাম ছোট্ট বেলার ঈদের দিনগুলো কেমন ছিলো আমাদের সময়?
এমন সময় তার বড় মেয়ে মোহিনী এসে বললো, বাবা তুমি তোমার ছোট বেলার ঈদের গল্প শুনাবে?
সেই কত আগের কথা মা, এখনও কি সব মনে আছে না কি?
যতটুকু মনে আছে বলো বাবা, আমরা সকলে শুনতে চাই।
প্লিজ বাবা বলো, মৃদুলা করুন সুরে বলতে লাগলো।
আচ্ছা, বেশ আমি বলছি। মনযোগ দিয়ে শুনতে থাক।

আমাদের ছোট বেলার ঈদ তোদের মতো এত জাঁকজমকপূর্ণ ছিলো না, বাজারে এত বাহারি রকম পোশাক ছিলো না। তবে আমাদের ছিলো অফুরন্ত আনন্দ, উচ্ছাস ও স্মৃতি। এসব স্মৃতি এখনও বুকের মধ্যে দগদগে হয়ে রয়েছে।
আমরা চার ভাই-বোন ছিলাম। ছিলাম বলছি কারন এখন আর সবাই একসাথে হয়ে ঈদ পালন করতে পারি না। দুই বোনের বিয়ের পর ওরা সব সময় শশুরবাড়িতে ঈদ করে। মাঝে মধ্যে এ বাড়িতে অতিথির মত আসে।

বাবা, তোমরা ভাই-বোন মিলে কিভাবে মজা করতা ঈদে বলো না?

আমাদের ঈদ শুরু হতো চাঁদ রাত থেকে, ইফতার করে আমরা একসাথে দৌড়ে মসজিদের পাশে মাঠে যেতাম চাঁদ দেখতে। এই চাঁদ না দেখা পর্যন্ত আমাদের ঈদ শুরু হতো না৷ এরপর বাসায় এসে সবাই মিলে পাশের বাসার ময়না আপুর কাছে মেহেদী পরতাম। কে আগে হাতের মধ্যে চাঁদ একে নিবে এ নিয়ে শুরু হতো তুমুল ঝগড়া। এক পযার্য়ে মারামারিতে গিয়ে ঝগড়া থামতো৷ তারপর শুরু হতো অনেক রাতঅব্দি গল্প, কার জামা কত সুন্দর সেটা নিয়েও একটা বড় ধরনের বিরোধ বেঁধে যেত। এর মধ্যে যদি কেউ কারো জামা আগে দেখে ফেলে সে কান্নকাটি করে একসাড় হয়ে যেত৷ এমনও বলতো সে আবার একটা নতুন জামা কিনবে তারপর ঈদ করবে।

তোমরা তো খুব মজা করতা, বাবা। ঈদের দিন কি হতো বাবা?

ঈদের দিন কে আগে ঘুম থেকে উঠবে এবং বাকীদের ডেকে তুলবে সেটা নিয়ে বড় রকমের পরিকল্পনা হতো, দেখা যেত যাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সে সবার পরে উঠেছে। তাকে অনেক কষ্টে ঘুম থেকে তোলা হতো। এরপর ছেলেরা আগে গোসল করে নতুন পাঞ্জাবী পরে নামাজে চলে যায়, এরপর বাড়ির মেয়েরা নতুন জামা পরে তৈরী হয়ে থাকে৷ বড়রা নামাজ থেকে আসামাত্র তাদের থেকে সালামী নেয়া শুরু করে। তারপর রুটি সেমাই খেয়ে এলাকার অন্য বাসা থেকে সকলে মিলে সালামী আনতে বের হতাম। সারাদিন এভাবেই পাড়া ঘুরে ঈদের দিন পার হতো।

সন্ধ্যা হলে ঘরে ফিরে নিজেদের টাকা গুনতাম। কার  কত সালামী হলো এ নিয়ে ঝগড়া শুরু হতো, যে বেশী টাকা পেত তার সাথে আমরা পেরে উঠতাম না। আফসোস!  এখন এসব দিন কেবলই অতীত।

বাবা, তোমাদের ঈদ আনন্দ অনেক ভালো ছিলো। এখন আমরা সবাই তোমার মত করে ঈদ পালন করবো।
মনোয়ার সাহেব এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ইজি চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিলেন।

Scroll to Top