জঙ্গলের বিভীষিকা

উদ্বিগ্ন মনে নার্সিং হোমে বসে আছে রাজেশ, স্ত্রী নীলাকে লেবার রুমে নেওয়া হয়েছে, আজ দুদিন ধরে প্রসব বেদনায় কষ্ট পাচ্ছে ভীষণ, ডাক্তার অপেক্ষা করেছেন স্বাভাবিক প্রসবের কিন্তু রোগীর অবস্থা দেখে আর দেরী করা ঠিক মনে করলেন না, রাজেশের সম্মতি নিয়ে ওটিতে সিজার করার জন্য এই কিছুক্ষণ আগেই গেছেন দুজন ডাক্তার, নার্সরা।

রাজেশের আত্মীয়স্বজন তেমন কেউ নেই, শুধু আছেন মা, তিনি আসতে চেয়েছিলেন, অনেক বুঝিয়ে মাকে বাসায় রেখে এসেছে।

দুশ্চিন্তায়, উত্তেজনায় স্থির হয়ে বসতে পারছে না,

ভীষণ অস্থির লাগছে, বাচ্চা হওয়া তো নতুন কিছু নয়, এত চিন্তারও কিছু ছিল না কিন্তু নীলার জীবনে যে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছে, কোনো একটি ভয়াবহ কারণে নীলা প্রচন্ড ভয় পেয়েছিল এবং গর্ভধারণের পরও সেই ভীতির রেশ মুছে যায়নি, সেজন্যই রাজেশের দুশ্চিন্তায় কাহিল অবস্থা।

ঘটনার শুরু আজ থেকে প্রায় দেড় বছর আগে।

শালবন জঙ্গলে নতুন ফরেস্ট অফিসার হিসেবে কাজে যোগ দিলো রাজেশ, সঙ্গে স্ত্রী নীলাকেও নিয়ে এসেছে, মা প্রথমে রাজী হননি, বনে জঙ্গলে ঘুরে কাজ করবে ছেলে, বৌ সেখানে কি করবে, বেশী দিন হয়নি বিয়ের, সুতরাং উভয়কে ছেড়ে থাকা সম্ভব? নীলা লজ্জায় শাশুড়িকে কিছু বলতে পারেনি কিন্তু স্বামীকে মিনতি করে বলেছে, ওগো, তুমি মাকে বুঝিয়ে বলো, তোমাকে ছেড়ে আমি একদিনও থাকতে পারবো না, আমার একটুও অসুবিধা হবে না।

সমস্যাটা তো রাজেশেরও, মুচকি হেসে বলেছে, সেখানে কিন্তু ডিশ লাইন নেই, শুনেছি নেটওয়ার্কের ও সমস্যা হয়, শপিং মল, ফাষ্ট ফুড, চাইনীজ কিছুই পাবে না,

আমাকে নেবে না তাই বাহানা করছো, মানুষ তো ওগুলো ছাড়াও বাঁচে, তাছাড়া তুমি থাকলেই যথেষ্ট, আর কিছু লাগবে না।

মা একা থাকবেন, এটা ভেবেই দ্বিধা করছিল রাজেশ কিন্তু শেষ পযর্ন্ত স্ত্রীর মলিন মুখ দেখে রাজী হলো, মাকে বোঝালো যে ওখানে থাকার ব্যবস্থা ভালো কিন্তু রান্নার মানুষ পাওয়া যাবে কিনা জানে না, নীলা থাকলে সুবিধা হবে। মা অগত্যা অনুমতি দিলেন, তবুও রাজেশ বললো,

মা তুমি যে একা হয়ে যাবে, আমাদের সঙ্গে চলো,

মা হেসে বলেন, এই বয়সে আর কোথায় যাবো? আর একা কোথায়, এতদিনের পুরনো বুয়া আছে, ও আমার যথেষ্ট খেয়াল রাখে, অসুবিধা হবে না, ফোনেও কথা হবে, তুই যা বৌকে নিয়ে।

শালবনে পৌঁছে ওরা মুগ্ধ হয়ে গেলো, চারদিকে গাছপালায় ভরা জঙ্গল, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অসাধারণ বাহার,

ফরেস্ট অফিসারের জন্য নির্দিষ্ট ছোট কাঠের বাংলোও সুন্দর, প্রয়োজনীয় অথচ সাধারণ আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো।

জঙ্গলের মধ্যে হিংস্র কোনো জানোয়ার নেই ঠিকই তবুও বাংলোর চারপাশে মজবুত কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা, বাংলোর সামনে ফুলের বাগান, পিছনে সবজীর ক্ষেত, ফলের গাছও আছে কিছু,

মালী, কেয়ারটেকার হাসানের থাকার ঘর আলাদা, মালীর বৌ ঝুমকীই ওদের রান্না করে দেবে, সব সুন্দর ব্যবস্থা শুধু একটাই অসুবিধা, দোকানপাট সব পনেরো মাইল দুরের শহরে, এখানে কিছুই পাওয়া যায় না, দরকারি সব জিনিসই শহর থেকে কিনে আনতে হবে, অবশ্য তাতে কোনো অসুবিধা নেই, সরকারি জীপ আছে, রাজেশ সেটা ব্যবহার করতে পারবে।

দুজনেই পথশ্রমে ক্লান্ত ছিল, রাতে ঝুমকীর হাতের রান্না সুস্বাদু খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লো।

হাসান ওদের সতর্ক করে দিলো, রাতে যেন বাইরে না আসে, যদিও গার্ড আছে পাহারায়, জঙ্গলের কিছু কিছু জায়গা বেশ দুর্গম, কোনো হিংস্র পশুর দেখা পাওয়া যায়নি যদিও তবুও সাবধান থাকা ভালো।

পরের কয়েক দিন ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যে কাটলো রাজেশের, ওকে সাহায্য করার জন্য পুরনো অভিজ্ঞ কর্মচারীরা রয়েছে আর আছে সহকারী সুমন, এরা সবাই খুব ভালো ভদ্র, মূল জঙ্গলে প্রবেশের মুখেই ছোট দুই কামরার অফিস।

জঙ্গলে লীজ নিতে আসা কাঠ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলা, দুরের জঙ্গলে কেউ যাতে চুরি করে গাছ কেটে না নিতে পারে সেসব খেয়াল রাখা ইত্যাদি আরো আনুষঙ্গিক কাজকর্মগুলো ভালো করে বুঝে নেওয়া, এসবেই শৈবালের ব্যস্ত সময় কাটতে লাগলো, অন্য কর্মচারী বিশেষ করে সুমন খুব সহযোগিতা করলো, তাই তেমন অসুবিধা হলো না।

অনেক সময় দুপুরে বাসায় এসে খেতে পারে না, ড্রাইভার খাবার নিয়ে যায়,

নীলাও কম ব্যস্ত নয়, ঝুমকীর সাথে ভাব হয়ে গেছে, দুজনে মিলে নানা পদ রান্না করে, ডাসা পেয়ারা পেড়ে খায়, তবে যা করে, সবই বাংলোর মধ্যে, স্বামীর কড়া মানা, কাঁটাতারের বাইরে যেন না যায়, চারদিকে জঙ্গল, এখনো কিছু কিছু জায়গা আছে যেখানে এখানকার লোকজনও যায়নি, নীলা জঙ্গল দেখার আবদার করাতে সে বলেছিল, নতুন কাজ, ভীষণ ব্যস্ত থাকি, একটু অবসর হলেই নিয়ে যাবো, কিন্তু একলা কখনো যেও না কেমন?

স্বামী সারাদিন ব্যস্ত থাকে, তাতে কি, পুরো সন্ধ্যা, রাত তো স্ত্রীকে সঙ্গ দিতে পারে, তবু ভাগ্যিস কারেন্ট আছে, টিভি ফ্রিজ ও আছে, মাঝে মাঝে অফিসের কাজ সারতে রাত হয়ে যায়, তখন ও আর ঝুমকী বসে বসে টিভি দেখে,

মায়ের সাথেও কথা হয়, উনি ভালো আছেন, এরাও সুখেই আছে জেনে খুশী হন, দিন কেটে যাচ্ছে ভালো ভাবেই।

আকস্মিক একটা ঘটনা ঘটায় স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ পতন হলো।

সুমন একদিন রাজেশকে জানালো, একজন লোক নিখোঁজ, জঙ্গলে গিয়েছিল আর ফেরেনি, অফিসের কর্মচারীরা সব স্থানীয়, তাদের বাড়ি বন থেকে দুরে, কেবল গরীব মজুররা বনের কাছেই ঝুপড়ি তুলে থাকে, ওদেরই একজনের সন্ধান নেই।

সাধারণত সরকারী কাজে লোকজন দল বেঁধে কাজ করে জঙ্গলে, হারানো লোকটা হয়তো কোনো ভাবে দল থেকে পিছিয়ে গেছিল, বনে হিংস্র প্রাণী নেই নিশ্চিত, কাঠ চোরেরাও কখনো মানুষ খুন করেছে বলে শোনা যায়নি, তাহলে!

অনেক খোঁজা হলো কিন্তু তাকে আর পাওয়াই গেলো না।

সকলের চিন্তা আরো বাড়লো যখন আরো একজন হারিয়ে গেলো। নিরাপত্তার জন্য গার্ড, বন্দুক ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে ফরেস্ট অফিসে, এসবের সাহায্যে জঙ্গলের ভিতরে যতটা যাওয়া যায়, তন্ন তন্ন করে খোঁজা হলো কিন্তু বৃথা, একদম যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছে মানুষটা,

একজন মুরুব্বীর মন্তব্য, কত প্রাচীন, এই জঙ্গল, কত রহস্য আছে এর মধ্যে, শুধু কি বাঘ ভালুকই মানুষ খায়! কে জানে কিসে খেয়েছে!

এভাবে চলতে থাকলে কেউ আর জঙ্গলে ঢুকতে চাইবে না, সব কাজ বন্ধ করে দিতে হবে,

কি করবে কেউ ভেবে পাচ্ছে না।

সব দায়িত্ব রাজেশের, কোনো কিছুর জন্য সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে তাকেই, সুতরাং আরো কিছু দিন দেখে তারপর হেড অফিসে রিপোর্ট করবে, বাংলোতেও গার্ড আছে, স্ত্রী সহ সবাইকে এই বিপদের কথা জানিয়ে নিষেধ করে দিলো, বাংলোর বাইরে কেউ যেন কোনো মতেই না যায়, গার্ডকে বলা হলো মূল গেট যেন সব সময় বন্ধ রাখে।

এর মধ্যে একজন স্থানীয় লোক অফিসে এলো, সরকারী লোক নয়, অনেকেই রেশমের গুটি, আমলকী, হরতকী ইত্যাদি বনজ সম্পদ সংগ্রহ করে দিন চালায়, লোকটা জানালো এগুলো নিতে সে একটু জঙ্গলের গভীরে চলে গিয়েছিল, সেখানে এক অদ্ভুত চিহ্ন দেখেছে মাটিতে, যেটা সে বুঝতে না পেরে সাহেবকে বলতে এসেছে।

রাজেশ সব শুনে ধমক দিলো, কেন সে একা জঙ্গলে গেলো, জানে না যে কি অজানা এক বিপদ দেখা দিয়েছে,

বিষন্ন সুরে লোকটা বললো, কি করুম সাহেব, পেটের ধান্দায় যাইতে হয়, যা পাই সেইগুলা বেইচা পরিবার লইয়া খাই, ভয় পাইলে আমাগো চলবো?

সবই জানে রাজেশ তবুও লোকটার বোকামিতে খানিক রাগারাগি করে সদলে রওনা হলো।

বনের যে জায়গাটায় লোকটা ওদের নিয়ে এলো, সেখানে আগেও এসেছে রাজেশ, জঙ্গলের বেশ গভীরে, গাছ যা কাটার কাটা হয়ে গেছে, এখন এখানে কারও আসার প্রয়োজন হয় না, তাই স্থানটা পরিত্যক্ত, পেটের দায়ে ভয়ভীতি উপেক্ষা করে একা এই প্রায় দুর্গম এলাকায় মানুষ আসতে বাধ্য হয়েছে, ভেবে দুঃখ পেলো রাজেশ, কপাল ভালো যে লোকটা অক্ষত অবস্থায় ফিরতে পেরেছে।।

জঙ্গলের মাটি এখানে নরম এবং কেমন ভেজা ভেজা, সবাই দেখলো, সেই মাটিতে কেমন অদ্ভুত একটা লম্বা দাগ পড়েছে, মোটা একটা গাছের গুড়ি টেনে নিলে যেমন ছাপ পড়ে তেমনি, গোড়ার দিকে একটু সরু, বড়সড় সরীসৃপের ছাপ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।

ভালো করে দেখে একজন বললো, একমাত্র খুব বড় মোটা অজগর সাপের সাথে মিল আছে ছাপটার কিন্তু সাপ তো একটু এঁকেবেঁকে যাবে, এতো সোজা দাগ, তাও পুরো শরীরের ছাপ পড়েনি, অজগর খুব বেশী উঁচুতে নিজেকে তুলতে পারে না, এটা তো মনে হচ্ছে কোমর পযর্ন্ত তুলে এগিয়েছে।

আরো কজন এটা সমর্থন করলো, সত্যিই যদি সাপ হয়ে থাকে তবে সেটার প্রস্থ আন্দাজ করতে পারলেও, দৈর্ঘ্য বোঝা গেলো না, যতদুর সম্ভব খোঁজাখুঁজি করলো সবাই কিন্তু কোন দিকে জিনিসটা গেছে, বের করতে পারলো না।

সন্ধ্যা হয়ে আসছে, এখানে থাকা আর নিরাপদ নয়, অফিসে ফিরে এসে আলোচনা করেও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারলো না, কি বা কিসের দাগ ছিল, নতুন করে বিপদ বুঝে যথা সম্ভব সতর্ক থাকতে বলা হলো সবাইকে।

এইবার হেড অফিসে জানানো হলো, তদন্তের জন্য লোকজন এলো, সব শুনে তারাও যথেষ্ট চিন্তিত, খুঁজেও কোনো আলামতই পাওয়া গেলো না, অত বড় জঙ্গল তো পুরোটা দেখা সম্ভব নয়, তারাও সাবধানে থাকতে বলে চলে গেলো।

সবাই কাজকর্মে মন দিলো, যথেষ্ট সাবধানতার সাথে, জঙ্গলে একা একদম নয়, প্রয়োজনীয় অস্ত্র নিয়ে তো বটেই, বিশেষ অজ্ঞাত রহস্য যখন জানা গেলো না।

রাজেশ স্ত্রীকে বললো, জঙ্গলে যাওয়ার কথা ভুলে যাও, যতদিন এর সমাধান না হচ্ছে, ততদিন ওটা বিপদজনক নিষিদ্ধ এলাকা,

আমাকে ভয় দেখাচ্ছো কেন? নিজেরা তো ঠিকই যাচ্ছো, বিপদ কি শুধু আমারই হবে, তোমাদের হতে পারে না?

আমরা পুরুষ মানুষ, অস্ত্র নিয়ে দল বেঁধে যাই, তারপরও দুশ্চিন্তায় থাকি, তার ওপর তোমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হলে তো মুস্কিল, অবলা নারী, কি দরকার অযথা বিপদ ডেকে আনার? যা বললাম মনে থাকে যেন, কিছুতেই যাবে না, ঠিক আছে?

স্বামীর এই ভাষণে ক্ষেপে গেলো নীলা, তার ওপর অবলা নারী বলায় চটে লাল, মুখে কিছু বললো না কিন্তু মনে মনে ঠিক করলো, নারী যে প্রয়োজনে সবলাও হতে পারে, সেটা জঙ্গল থেকে ঘুরে এসে দেখিয়ে দেবে, সাপের দাদাকেও পরোয়া করে না, সুযোগ বুঝে সবার অগোচরে বেরিয়ে যাবে।

পর পর কয়েক দিন চেষ্টা করলো কিন্তু গেটের কাছে আসতেই নিঃশব্দে গার্ড এসে সামনে দাঁড়িয়ে মাথা নাড়লো, সাহেবের মানা আছে ম্যাডাম, বাইরে যাবেন না।

সুযোগ এলো দুদিন পর, দুপুরে অফিসে খাবার পাঠিয়ে নিজেও খেয়ে, হয় বই পড়ে নয়তো ঘুমায়, অন্যান্যরাও যার যার ঘরে বিশ্রাম নেয়, গার্ডও গেটের পাশের ছোট ঘরে একটু ঝিমিয়ে নেয়, এই সুযোগটাই কাজে লাগালো নীলা।

গার্ডকে নিয়ে সমস্যা হলো না, সে বেচারা বাথরুমে গিয়েছিল, কিছুই টের পেলো না, গেটের চাবি ঐ ঘরেই একটা পেরেকে টাঙানো থাকে, চুপিসারে বেরিয়ে গেলো নীলা।

ঠিক সেই সময় জীপে উঠছে রাজেশ, শরীরটা খারাপ লাগায়, সুমনকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বাসার দিকে রওনা হলো, ভাবলো নীলাকে চমকে দেবে এবং দুপুরের খাবার আজ একসাথেই খাবে।

বাংলোর সামনে জীপ দাঁড়াতে রাজেশ নিজেই চমকে উঠলো, গেটের সামনেই হাসান, মালী ওরা সব দাঁড়িয়ে আছে, কয়েকজন স্থানীয় লোকজনও আছে, গার্ড এবং ওরা মুখ শুকনো করে দাঁড়িয়ে আছে, রাজেশকে অসময়ে দেখে হতভম্ব হয়ে মাথা নীচু করে ফেললো।

সবার ভীত মুখের দিকে চেয়ে বললো, কি ব্যাপার!!! কি হয়েছে, এখানে সবাই কি করছো!! নীলা কোথায়?

হাসান ভয়ার্ত স্বরে বললো, দুপুরে ওরা ঘুমিয়ে ছিল, সেই অবসরে উনি বের হয়ে গেছেন, কেউ টের পায়নি।

প্রচন্ড ধাক্কা খেলো রাজেশ, দিশেহারার মত গার্ডের দিকে চেয়ে চিৎকার করে উঠলো, তুমি কি করছিলে? নীলা বের হলো কি করে?

অপরাধীর মত মুখ করে মিন মিন করে জানালো গার্ড, সে টয়লেটে গিয়েছিল, এসে দেখে গেটের তালা খোলা, সবাইকে জাগিয়ে পুরো বাংলো খুঁজেও কোথাও পায়নি।

হাসান বললো, খবরটা দেবার জন্য অফিসে যাচ্ছিলো সে, এই সময়ই সাহেব এসে পড়লেন।

রাজেশ তখনই হাসানকে জীপে করে পাঠিয়ে দিলো, সুমন বন্দুক ও লোকজন নিয়ে যেন দ্রুত চলে আসে।

উদভ্রান্তের মত রাজেশ এদিক ওদিক ঘুরে আন্দাজ করতে চেষ্টা করলো নীলা কোনদিকে গেছে, মানা করা সত্ত্বেও কি বোকামী করলো ও- আতঙ্কে রক্ত জমাট বেঁধে গেলো রাজেশের, কিছু ক্ষণের মধ্যেই সে নীলার স্যান্ডেলের ছাপ দেখতে পেলো।

অফিস খুব দুরে নয় সুমনরা উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে এলো, ঠিকই, নীলা জঙ্গলেই গেছে, পায়ের ছাপ অনুসরণ করে সবাই এগুলো, বেশ গভীরে প্রবেশ করে ওরা বুঝলো এদিকে বহুদিন কেউ আসেনি, ঘন গাছে ঘেরা অত্যন্ত দুর্ভেদ্য এখানকার জঙ্গল,

চিন্তার ব্যাপার, নীলার পায়ের ছাপও আর দেখা গেলো না, মাথা ঠাণ্ডা রেখে রাজেশ খুঁজতে লাগলো স্ত্রীকে, চিৎকার করে ডাকলোও, চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে সবাই সন্ধান করতে লাগলো কিন্তু কোনো চিহ্নই নেই নীলার।

এই সময় সুমন শুনতে পেলো চাপা আর্তনাদ, যন্ত্রণাকাতর সেই চিৎকার শুনে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো সবার।

ভয়ার্ত কন্ঠের গোঙানীর আওয়াজ অনুসরণ করে দ্রুত এগিয়ে খোলা একটা জায়গায় এসে থমকে দাঁড়িয়ে গেলো সবাই, মোটা মোটা গাছের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলোয় যে অবিশ্বাস্য ও ভয়াবহ দৃশ্য দেখলো সবাই, দুঃস্বপ্নেও এমনটা কখনো দেখবে না এবং যতদিন বেঁচে থাকবে, এই বিভীষিকা জীবনেও ভুলতে পারবে না।

নীলা মাটিতে শুয়ে, ওর শরীরের ওপর এক ভয়ংকর মোটা সাপ, না না পুরোপুরি সাপ বলা যাবে না,

কোমর থেকে নীচের অংশটুকু অজগরের সাথে মিল আছে, কিন্তু আরো মোটা, ঠিক যেন গাছের গুড়ি, বাকীটা মানুষের মতই কিন্তু সম্পূর্ণ মানুষ নয়, সমস্ত শরীর চাকা চাকা দাগে ও আঁশে ভরা, দুপাশে সরু লিকলিকে দুটি হাত, কুৎসিত জিনিসটা পুরো শরীর দিয়ে নীলাকে পেঁচিয়ে ধরেছে,

যন্ত্রণাকাতর নীলার চিৎকার করারও শক্তি নেই, গোঙানীর মত আওয়াজ বেরুচ্ছে শুধু।

স্তম্ভিত হয়ে সবাই এই বীভৎস, কল্পনার অতীত, মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে পাথর হয়ে গেলো, তারপর মনের জোর একত্রিত করে রাজেশ তীব্র আতঙ্কে চিৎকার দিয়ে নীলাকে ডেকে উঠলো,

মানুষের শব্দ পেয়ে ভয়াবহ আজাবটা মুখ ঘুরিয়ে তাকালো, দানবটার চেহারা দেখে আঁতকে উঠলো সকলে।

সাপের ফণার মত আকৃতি মুখের, কপালটা ঢালু, নাক বাঁকানো, পলকহীন শীতল দৃষ্টি, ঠোঁটের ফাটল দিয়ে লকলকে চেরা জিভ বেরিয়ে আছে, পুরো শরীরের রঙ কালচে সবুজ, সমস্ত দেহে শ্যাওলা ও পিচ্ছিল পদার্থের জন্য কেমন একটা গা ঘিনঘিনে চকচকে ভাব, ভয়ংকর অশুভ, বিভীষিকাটা কোথা থেকে এলো, কতদিন ধরে জঙ্গলে আছে, কেউ বলতে পারে না, মানুষজন নিখোঁজ হওয়ার কারণ তাহলে এই আজরাইল,

শয়তানটার একমাত্র সঠিক নাম হবে সর্প-মানব।

নীলাকে ছেড়ে অবিশ্বাস্য গতিতে ঠিক সাপের মত পালিয়ে যেতে থাকে ঘৃণিত জিনিসটা, কঠিন বাস্তবতা উপলদ্ধি করে শিউরে ওঠে সুমন, নিমিষেই সিদ্ধান্ত নেয়, ওটাকে পালাতে দিলে প্রত্যেকের জীবন মরণ সংশয় দেখা দেবে, ভয় পেলে চলবে না, যেভাবেই হোক মেরে ফেলতে হবে সর্প-মানবকে।

উত্তেজিত কন্ঠে রাজেশকে বলে, স্যার আপনি ভাবীকে নিয়ে জলদি হাসপাতালে চলে যান, আমি সবাইকে নিয়ে ওটার পিছু নিচ্ছি, যে করে হোক শয়তানটাকে মেরে ফেলতে হবে।

রাজেশের সর্বাঙ্গ অবশ তবুও দ্রুত নীলার কাছে আসে, জ্ঞান নেই ওর, দুহাতে স্ত্রীর দেহটা তুলে দৌড়ে জীপে উঠে ড্রাইভারকে হাসপাতালে যেতে বললো।

সুমনের বন্দুকের নিশানা অব্যর্থ, সাথের লোকজনের কাছেও নানা অস্ত্র আছে, আস্থা রাখা যায় ওদের ওপর, তারপরও উদ্বিগ্ন হলো রাজেশ, যদি ওরা ব্যর্থ হয়? না মারতে পারে জঙ্গলের বিভীষিকাকে, তাহলে তো কেয়ামত শুরু করবে দানবটা।।

হাসপাতালে চিকিৎসার যতটুকু সুযোগ সুবিধা ছিল, সব চেষ্টা করেও নীলাকে পুরো সুস্থ করা যায়নি, শারীরিক, মানসিক দুটোই ওকে বিধ্বস্ত করে ফেলেছে, এখানে এর চাইতে উন্নতমানের চিকিৎসা সম্ভব নয়, ডাক্তাররা ঢাকায় নিয়ে যেতে বললেন, এ্যামবুলেন্সে করে ওকে ঢাকায় নেবার ব্যবস্থা করা হলো।

রওনা হওয়ার আগে সুমন এসে দেখা করলো, বিভীষিকাটাকে ওরা মেরে ফেলতে সক্ষম হয়েছে, শালবন জঙ্গল এখন নিরাপদ।

সুমনকে কাজের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে রাজেশ বিদায় নিলো, আর ফিরবে না সে এখানে, যে অপুরণীয় ক্ষতি তার হয়ে গেলো, তাতে পুনরায় স্বাভাবিক ভাবে এখানে কাজ করা সম্ভব নয়, অশ্রু সজল চোখে রাজেশকে সবাই বিদায় জানালো, অমায়িক ভদ্র এই মানুষটিকে ওরা ভালোবেসেছিল।

নীলার জীবনে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ স্মৃতি মন থেকে মুছে যাবে কিনা সন্দেহ, আগের মত সুস্থ, স্বাভাবিক হয়ে উঠবে কিনা জানে না রাজেশ,

পুরোটা পথ নীলা প্রায় অচেতন হয়ে পড়ে রইলো, একটু জ্ঞান ফিরলেই চিৎকার করে ওঠে, দুর্বিষহ যন্ত্রণা ও আতঙ্কে ছটফট করে, রাজেশ ওর হাত ধরে বিষন্ন মুখে বাইরে তাকিয়ে রইলো, শালবনের আতঙ্ক অনেক পিছনে পড়ে রইলো।

মা সব শুনে কান্নাকাটি করে অস্থির, ছেলেকে বকলেন, বৌকে নিতে মানা করেছিলেন, অমন লক্ষ্মী, হাসিখুশি মেয়েটা, তার কি হাল করে এনেছে, কোনো জবাব দিতে পারলো না রাজেশ, সে নিজেই তো জ্যান্ত বিভীষিকাটাকে ভুলে যেতে পারছে না, নীলার অবস্থা শোচনীয় তো হবেই, ভবিষ্যত জানতে পারে না মানুষ, তাহলে অবশ্যই মায়ের নিষেধ শুনতো।

জাঁদরেল বিশেষজ্ঞ সব চিকিৎসকরা ঘটনা শুনে স্তম্ভিত, এই যুগে ভয়ংকর অথচ আজগুবী সত্যিটা মেনে নেওয়া কষ্টকর কিন্তু চোখের সামনে নীলার বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে অবিশ্বাস করাটাও কঠিন।

সাংঘাতিক আতঙ্কে ওর মানসিক ভারসাম্য হারানোও অসম্ভব নয়।

আন্তরিক চেষ্টার ফলে নীলা কিছুদিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরে এলো; যে নীলা ফিরেছে, সে আগের নীলা নয়, হাসেনা নিজে থেকে কথা বলে না, জোর করে সব কিছু করাতে হয়, জড় পদার্থে পরিণত হয়েছে, শাশুড়ির মমতা যত্ন, স্বামীর ভালোবাসা কিছুই ওকে স্বাভাবিক করতে পারে না, ওদের জীবনের সুখ, শান্তি, আনন্দ সবই হারিয়ে গেছে।

ইতিমধ্যে নীলা গর্ভবতী হলো, খুশীর ব্যাপার হলেও নীলার ভীত মলিন মুখের দিকে চেয়ে কেউ আনন্দিত হতে পারলো না, নিজেকে সে আরো গুটিয়ে নিয়েছে, কথা তো বলেই না, রাজেশ কাছে এলেই ছিটকে সরে যায়, প্রায় অস্পষ্ট স্বরে ফিসফিসিয়ে বলে, আমি অশুচি, আমাকে ছুঁয়ো না।

একদিন, বেশ জোরেই বলে উঠলো, ওটা আমাকে মেরে ফেলবে,

বিস্মিত রাজেশ বললো, কে মেরে ফেলবে!

শয়তানের যে বাচ্চাটা পেটে আছে,

সে কি! ও আমাদের সন্তান, ছোট্ট শিশু, কিভাবে মারবে তোমাকে?

কোনো সময় অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বলে, তুমি মানা করেছিলে, তোমার নিষেধ শুনিনি, তারই শাস্তি পাচ্ছি,

রাজেশের প্রায় পাগল হবার দশা, কোনো সান্ত্বনাই নীলাকে আশ্বস্ত করে না, আর এক সমস্যা, ওকে কিছুতেই চেকআপের জন্য ডাক্তারের কাছে নেয়া যায় না, ঘর থেকে বেরই হতে চায় না, এই সময় সবচেয়ে বেশী দরকার সেটাই হচ্ছে না, অগত্যা ডাক্তারকে বাসায় আনার ব্যবস্থা করা হলো, ডাক্তারও অনেক বোঝালেন, মা হওয়া একটা মেয়ের জন্য খুশীর ব্যাপার, মাতৃত্বেই নারীর পূর্ণতা, দ্বিগুণ জোরে চিৎকার করে উঠলো নীলা, না, আমি চাই না, চাই না ঐ শয়তানের মা হতে, ওটা মানুষের বাচ্চা নয়, বিশ্বাস করো তোমরা, চিন্তিত মুখে ডাক্তার রাজেশকে আড়ালে নিয়ে বললেন, গর্ভবতীকালীন কিছু পরীক্ষা করা খুব দরকার, পেশেন্ট যে ভয় পেয়েছে, তাতে আজেবাজে চিন্তা মাথায় আসা স্বাভাবিক, যেভাবেই হোক পরীক্ষাগুলো করা একান্ত দরকার।

রাজেশ ঢাকায় এসে স্ত্রীর অবস্থা জানিয়ে হেড অফিসে রিপোর্ট করেছিল, অফিস বিবেচনা করে ওকে ঢাকার অফিসেই যোগ দিতে বলেছে কিন্তু কাজ কর্ম সব মাথায় উঠেছে, নিয়ম রক্ষার জন্য কোনো মতে যায় অফিসে, সর্বদা নীলার চিন্তায় কিছুই মন দিয়ে করতে পারে না।

মা যথাসাধ্য করেন, রাজেশও অনেক বুঝিয়ে আদর করে বলেছে, লক্ষ্মীটি, তুমি এত বুদ্ধিমতী, এই সময় অবুঝ হলে চলে, যেখানে প্রতিমাসে ডাক্তার দেখানো দরকার, সেখানে একবারও দেখাতে পারলাম না, কিছু পরীক্ষা না করালে, আন্দাজে কত আর ওষুধ দেওয়া যায়।

কোনো ডাক্তারের দরকার নেই, ভালোই থাকবে ওটা, শুধু আমাকে বাঁচতে দেবে না।

ওর ভয়টা যে ভিত্তিহীন, ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিন্ত করা যেতো নীলাকে কিন্তু সেই সুযোগ পাওয়া গেলো না।

প্রসবের সময় এগিয়ে আসে, মাঝে মাঝে রাজেশের মনে অপ্রীতিকর চিন্তা হয়, আপদটা নীলার পেটে না আসাই ভালো ছিল, এমনিতেই ভয় পেয়ে নীলা অস্বাভাবিক হয়ে গেছে, তার মধ্যে সন্তানটা গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে, সন্তানের প্রতি সেও আর আগ্রহ অনুভব করে না।

যথাসময়ে প্রসব বেদনা শুরু হতে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো, জরুরী কয়েকটি পরীক্ষা করে ডাক্তার চিন্তিত হলেন, প্রেশার হাই, হার্টের অবস্থাও সুবিধাজনক নয়, উনি সেই ডাক্তার, যিনি বাসায় যেয়ে নীলাকে দেখেছিলেন, রোগীর কেসটা তিনি ভালোই জানেন,

পৃথিবীতে অনেক রহস্য আছে, যার কোনো ব্যাখ্যা বা সমাধান বিজ্ঞান করতে পারেনি, নীলার জীবনে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনাও এমনি এক ভীতিকর ও জটিল রহস্য, আলট্রাসোনোতে বাচ্চার সঠিক ছবি এলো না, পেটের মধ্যে ঝাপসা কুয়াশার মত আবরণে বাচ্চা ঢাকা, বোকা হয়ে গেলেন ডাক্তার, ডাক্তারী জীবনে এমন অদ্ভুত ব্যাপারের সম্মুখীন হননি আগে।

পেশেন্টের অবস্থা বিবেচনা করে দ্রুত সিজারের জন্য প্রস্ততি নিতে লাগলেন ডাক্তার।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাজেশ তাকালো লেবার রুমের দিকে, নীলার অস্পষ্ট যন্ত্রণাময় গোঙানী ভেসে আসছে, আর চিৎকার করার শক্তি নেই ওর, প্রিয়তমা স্ত্রীর দুর্বিষহ ব্যথা উপলদ্ধি করে শিউরে উঠতে লাগলো ওর শরীর, আহা কি কষ্টই না পাচ্ছে নিষ্পাপ নারী,

অবশেষে উৎকণ্ঠিত সময় শেষ হলো রাজেশের, লেবার রুম থেকে বেরিয়ে একজন নার্স এসে দাঁড়ালো ওর সামনে, আতঙ্কে তার চোখ বিস্ফারিত, থরথর করে কাঁপছে পুরো শরীর, নার্সের চেহারা দেখেই লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো রাজেশ, ব্যাকুল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে সিস্টার? আমার স্ত্রী ভালো আছে তো?

বিবর্ণ ফ্যাকাশে মুখে কোনো মতে বললো, আপনি ভিতরে যান,

লেবার রুম দেখিয়েই নার্স উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে পালালো।

এক দৌড়ে রাজেশ রুমে ঢুকেই হতভম্ব হয়ে গেলো, একজন নার্স অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে, আরো দুজন এক কোনে দাঁড়িয়ে মুখে হাত চেপে চিৎকার ঠেকাবার চেষ্টা করছে, ভয়ে দুজনই কাঁপছে, দুজন ডাক্তার, তাঁদের অবস্থাও শোচনীয়, ঘামে ভিজে গেছে মুখ, অবিশ্বাস ও ভীতি তাঁদের চোখে , ডাক্তারদের অনেক রকম ভালো মন্দ অভিজ্ঞতা থাকে, মৃত দেহ, কুৎসিত  সব রোগ বালাই, মানুষের অভূতপূর্ব মানসিক যন্ত্রণা ইত্যাদি নিয়েই তাঁদের কারবার, অহরহ অদ্ভুত সব কেস দেখে অভ্যস্ত, কিন্তু আজকের এই সৃষ্টিছাড়া ব্যাপার ডাক্তারী শাস্ত্রেও অচল, বিজ্ঞানকে হার মানিয়ে দিয়েছে।

পলকে সব দেখে নিয়ে রাজেশ তাকালো অপারেশন টেবিলে, সেখানে শায়িত নীলার স্থির নিথর দেহ পড়ে আছে, দেখেই বোঝা যায় ও আর বেঁচে নেই, পাগলের মত চিৎকার করে উঠলো রাজেশ, ডাক্তার, আমার স্ত্রী? চলে গেলো আমাকে ছেড়ে? বাঁচাতে পারলেন না?

বাচ্চা, বাচ্চাটা কোথায়?

কম্পিত আঙুল তুলে ডাক্তার মেঝের দিকে ইশারা করে দুর্বল ভাবে মাথা নাড়লেন,

পৃথিবীটা দুলে উঠলো রাজেশের চোখের সামনে, সবার মত সেও আতঙ্ক, অবিশ্বাস নিয়ে তাকালো মেঝেয় পড়ে থাকা ওদের জীবনের শনির দিকে,

সর্প-মানবের ক্ষুদে একটা সংস্করণ পড়ে আছে মাটিতে, লেজ নেড়ে বীভৎস দেহটা এগোতে চেষ্টা করছে, চেরা ছোট জিভটা লকলক করছে সর্প- শিশুর, এই ঘৃণিত জিনিস নীলা বহন করেছে দীর্ঘদিন ওর শরীরে! ওরা কেউ বিশ্বাস করেনি নীলার কথা, রাগে দুঃখে অস্বাভাবিক জোরে চিৎকার করে উঠলো রাজেশ, ডাক্তার, মেরে ফেলুন জলদি ঐ পিশাচকে, কিছুতেই যেন বাঁচতে না পারে জলজ্যান্ত শয়তানটা,

তারপরই নীলার শরীরটাকে বুকে জড়িয়ে অদম্য কান্নায় ভেঙে পড়লো, প্রিয়তমা তোমার এই অযোগ্য স্বামীকে ক্ষমা করে দিও, তোমাকে রক্ষা করতে পারিনি, নীলা সবার সয় না, আমারও সইলো না।

লেখাঃ নাজনীন রহমান

Scroll to Top