নারী উন্নয়ন

বাংলাদেশে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস শুরু হয়েছিল বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের হাত ধরে। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফল আজকের নারীবাদের বলিষ্ঠ স্বর। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বেগম রোকেয়া লৈঙ্গিক বৈষম্যের প্রতিবাদে সোচ্চার থেকেছেন। তার এবং পরবর্তী নারী অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া সকল নারীবাদীদের অবদান কতটা মনে রাখতে পেরেছি আমরা? সুবিধাবঞ্চিত নারীদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই বা কতোটা অবদান রাখতে পেরেছে নারীবাদিতা?

বেগম রোকেয়ার শুরু করা প্রচেষ্টায়, দেখিয়ে দেওয়া সে পথে হেঁটে আমরা যতটুকু সফলতা অর্জন করেছি সেটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুব একটা নগণ্য নয়। তবে এ অল্প পথ পাড়ি দিতেই আমাদের সময় লেগে গেছে প্রায় এক শতাব্দী। নারী আজ অন্ধকার হেঁশেল থেকে বাইরে বের হয়ে এসেছেন। ঘরে বাইরে সমান ভাবে তাদের পদচারণা। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন আজকের নারীরা। পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমান তালে কায়িক পরিশ্রম করছেন তারা সর্বক্ষেত্রে । কৃষিতে, শিল্পে, গার্মেন্টসে, ক্ষুদ্র ব্যবসা থেকে শুরু করে সর্বত্র আজ নারীদের অংশ আশা জাগানিয়া। কিন্তু এ শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়েছে কিনা সেটি আজ সমাজের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ।

গত ২০ বছরে বাংলাদেশে নারী শ্রমিকের সংখ্যা তুলনামূলক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যাদের সিংহভাগ বর্তমানে পোশাক শিল্পে শ্রম দিচ্ছেন। ‘মানুষের জন্য’ ফাউন্ডেশনের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ২৫ শতাংশ নারী শ্রমিক পোশাক কারখানায় যৌন হয়রানি সহ নানারকম প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, অনানুষ্ঠানিক খাতে বৈষম্য, স্বীকৃতিবিহীন নারী শ্রম, পারিবারিক বোঝাপড়ার অভাব ইত্যাদি সব মিলিয়ে নারী শ্রমিকরা বাংলাদেশে সমসাময়িককালে সর্বাধিক রূপে অবহেলিত।

ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম জেনারেল নেপোলিয়ান বেনোপোর্ট বলেছিলেন “তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো।” বাণীটি সবার জানা থাকলেও কথাটির গূঢ় অর্থ আমরা আত্মস্থ করতে পারিনি। পারলে সমাজে মেয়েদের আমরা সঠিক সম্মান প্রদর্শন করার চেষ্টা করতাম।

Scroll to Top