চৌকির উপর বসিয়া পত্রিকা হাতে খবর পড়ায় ব্যাস্ত রহমান শেখ। মুখে পাকা গোঁফ, পরনে সাদা লুঙ্গি আর হালকা খয়েরী রঙের ফতুয়া। বয়স ষাটের আসে পাশে। সমাসপুর গ্ৰামের সকলেই তারে রহমান বাবুর্চি নামে জানে। বেশ সুস্বাদু রান্না করিতে ওস্তাদ। শুধু যে নিজ গ্ৰামে তাহার রান্নার জাদু দেখায় তা না। মাঝে মাঝে শহরে গিয়াও শহরবাসীদের চমকায় আসে। তাহার রান্না একবার যে খায় স্বাদ সহজে ভুলিতে পারেনা। তবে কয়েক মাস ধরিয়া এই ভদ্রলোকের ব্যবসায় ভালোই মন্দা দেখা দিয়াছে।
সাল ১৯৭১। সমস্ত বাংলাদেশ এখন ভীত হইয়া জীবন যাপন করিতেছে। হানাদার বাহিনী ছড়াইয়া পড়িয়াছে সব খানেই। চারি পাশে আর্তনাদ । যেদিকেই দুচোখ যায় লাশের ঢেউয়ের দেখা মেলে। এমতাবস্থায়, যার মাথায় বিবাহ ঘুরিবে সে নিতান্তই পাগল বলিয়া গণ্য হইবে তাহা আমি মনে করি।
রহমান শেখের বিবি মরিয়ম দিন রাত নামাজ পড়িয়া প্রার্থনা করে যাতে সমস্ত দুঃসময় কাটিয়া তুলিতে পারে। তাহার হাতের কব্জিতে তসবিহ একটা ঝুলতেই থাকে। সময় পাইলেই তাহা নিয়ে বসিয়া পরে। বিবাহের সময় তাহার বয়স মাত্র আঠারো। এখন আধা বুড়িয়ে গেছে।
পত্রিকার খবর সব একই। কতগুলা লাশ পড়লো আর কতগুলা ঘর উজার হইলো তা দিয়াই আস্ত একটা পত্রিকা সাজানো হইতো। তাছাড়া দেশে এখন আর তেমন কিছুই হইতেছে না।
এক সপ্তাহ নতুন আর কিছুই হইলো না। তবে এক সপ্তাহ পর দুইজন আগন্তুক এর আবির্ভাব ঘটলো। তখন বেলা বাজে আড়াইটা।
দেশের পরিস্থিতির কারণে গ্ৰামের মানুষ এখন আর আগের মতো যাওয়া আসা করেনা বলিলেই চলে। তবে দুই বাড়ি পরে কাঠমিস্ত্রি মুন্সীর বিশ বছর বয়সী মেয়েটা প্রায় প্রত্যেকদিনই একবার করিয়া আসে।
-কমলাই হইবে। অনেকটা নিশ্চিত গলায় বলিল মরিয়ম।
দরজা খুলতেই দেখিলো বছর ছাব্বিশ করিয়া একজন ছেলে। বিশাল দেহ। দেখিলে মনে হইবে দিনরাত কসরত করিয়াছে। গাত্রে বেশ শক্তি, তাহার দুখানা চোখ খানেক টা বাজপাখির চোখের মতোই সতর্ক। পরনে আছে সৈনিকের উর্দি ।তবে এই উর্দি কোনো বাংলার সৈনিকের নয়। রহমান শেখ দরজা খুলিয়া হতভম্ব হইয়া গেল। এই সুরততো তাহার পরিচিত তবে এই পোশাকে কেন? সে মুখ কালা করিয়া তাকাইয়া রইলো।
দরজার ওপর পাশ থেকে বলিয়া উঠিলো-
-চাচা চিনছো আমারে? আমি জহির।
-তা আমি দেখিয়াই চিনছি। তবে পোশাক এর হিসাব বুঝলাম না। তুমি কি বাংলার রক্ত হইয়া বাংলার মানুষেরেই মারতাছো নাকি? অহন আমারে আর তোমার চাচিরে কাতিল করবা? তার আগে আমারে এইটা কও তুমি কলিকাতা থেকা কবে আইসো?
-তোমার সব হিসাব আমি মিলাইয়া দিব চাচা। তবে তুমি যা ভাবতাছো তা এক আনাও সত্য না। অহনের জন্য একটু বাইর হও। একজন আগন্তুক বাহিরে অপেক্ষা করিতেছে। তোমার আর চাচির সাহায্য লাগিবে। এই এক উপকার করিয়া দাও চাচা। আল্লাহর দোহাই লাগে।
রহমান শেখ আর মরিয়ম বাহিরে আসিয়া দেখিলো একজন বৃদ্ধ মহিলা বাড়ির উঠানের এক পাশে বসিয়া আছে। সমস্ত দেহ খানিকটা হেলিতেছে। দুচোখ তাহার শূন্য আকাশের দিকে। হাত কাপা রোগও আছে। আস্তে আস্তে কি সব বিড়বিড় করিতেছে।
-মনু চইলা আসবে, আরেকটু অপেক্ষা করি।
বয়স সত্তরের বেশি হইবে। গাত্রবর্ণ ফর্সা। মাথার সবকটি চুল পাকিয়া গিয়াছে।
-উনি কে? আর এইখানে কি করে? রহমান শেখ প্রশ্ন সূচক কন্ঠে বলিয়া উঠিলো।
-সব উত্তর পাইবা। তার আগে ওনারে কিছু খাইতে দেও। তিনদিনে শুকনা চিড়া ছাড়া আর কিছুই পেটে যাই নাই।
তাহাকে দেখিয়া মরিয়মের মন গলিয়া গেল।
-আমি খানা লাগাচ্ছি। আপনারা হাতমুখ ধুইয়া আসেন। আজকে ঘরে বেশি কিছু রান্না হয়নাই। সরিষা তেল দিয়া খিচুড়ি সাথে গরম ঘি আর বেগুন ভাজা।
-আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আপনাগো রহম করুক। – জহির।
-তুমি মিয়া পারিলে এই কাপড়খানা বদলাও। লোকে দেখিলে আমারে আর আমার বিবিরে সমাজচ্যুত করিবে। রহমান শেখ এখনো তার হিসাব মিলাইতে পারিতেছে না। সে এখনো ভীত।
দুপুর বেলা সকলেই গলা অব্দি খাইলো। মরিয়ম বিশেষ যত্ন করিয়া বিণু খালাকে খাইতে দিলেন। খালার চোখে মুখে যেন ঝিলিক ফুটিলো। বুঝা গেল তিনি বেশ তৃপ্তি করিয়া খাইয়াছে। খাবার শেষে মরিয়ম তারে বিশ্রামে জন্য ভিতরের ঘরে লইয়া গেল।
রহমান শেখ আর থাকিতে না পারিয়া প্রশ্নের উপর প্রশ্ন করিতে লাগিলো। তার আগে হৃদয় বিদারক কিছু কথাও কহিলো।
-তুমি এইবার আমারে সব খুইলা কও। আমারে হার্টের ব্যারাম দিওনা কইলাম। তোমারে তোমার বাপে কত ধার দেনা করিয়া কলিকাতা পাঠাইছিলো। হেয় চাইছিলো তুমি মন দিয়া লেখাপড়া করো। যেইডা তোমার
এখানে থাকিলে হইতো না। চৌধুরী হোসেন সাহেব আমার বড়ই শ্রদ্ধার মানুষ আসিলো। এত প্রভাবশালী হইয়াও এই হতদরিদ্রের কপাল খুলিয়া দিসিলো। তারে ওইদিন কথা দিসিলাম বিপদে আপদে তার জন্য প্রাণ দিয়া কইরা যামু।হেয় গত হওয়ার আগে আমার হাত ধইরা কইছিলো আমি যেত তোমারে ঠিকঠাক কলিকাতা পৌঁছায়ে দেই। হের কি লোকের অভাব আসিলো নাকি? কও?
তোমারে আমি নিজে টিকিট কাইটা ট্রেনে তুইলা দিসিলাম। তুমি ফিরা আইসো ক্যান? নাকি যাও-ই নাই? কোনডা?
-তোমারে সব প্রশ্নের উত্তর দিমু আমি। তুমি আগে ঠান্ডা হও।
তুমি বড়ই আচ্ছা মানুষ চাচা। তোমারে শ্রদ্ধা করি। এর থিকাও বেশি বিশ্বাস করি। তুমি যা আব্বার আর আমার জন্য করছো এতে আমরা উভয়ই সারাজীবন ঋণী থাকুম।
সেদিন আমি কলিকাতা যাই-ই নাই। পরের স্টেশনে নামিয়া গেছিলাম। আমি এই বাংলার ছেলে হইয়া এমন বিপদের সময় দেশ ছাড়িতে পারিনাই। নিজেরে সেই সময় বিশ্বাসঘাতক মনে হইছিলো। কাজেই সুযোগ বুঝিয়া ট্রেন থেকে নামিয়া গেলাম দেশ রক্ষার্থে। যেই টাকা আব্বা আমারে দিসিলো ওই টাকা লইয়া শহুরে পারি দেই।
-তুমি কি এতদিন যুদ্ধ করতাছিলা? অবাক হইয়া রহমান শেখ প্রশ্ন করলো।
-জহির হ্যা- সূচক উত্তর দিল।
-তয় তুমি এই উর্দি পড়ছিলা ক্যান? তোমারে তো এহন সবাই বিশ্বাসঘাতকই কইবো।
-এই উর্দি বাধ্য হইয়া পড়ছিলাম। যাতে বিণু খালারে কোনো রকমের আঘাত ছাড়াই সরাইয়া আনতে পারি।
-বুঝাইয়া কও তো একটু ছোকরা!
বিণু খালা ঘুমাইয়া যাবার পর মরিয়ম দরজার ফাঁকে কান পেতে রইলো। জহির এবার বলা শুরু করিলো-
যেই ট্রেন দিয়া আমি ঢাকা পৌঁছাই ঐ ট্রেন স্টেশনে থামতেই একদল সৈন্য হামলা করিলো। তখন একরকম গোলাগুলি বাজিয়া গেল। সকলে যে যার মতো পালাইতে শুরু করিলো। আমিও তাই করিলাম। তবে আমার দুর্ভাগ্য দেহো চাচা; ঔ শুয়োর গো একটা গুলি আমার বাম পায়ে ভেদ করে। বহু কষ্টে রোকন আমারে ঔখান থেকা তুইলা আনে।
-রোকন কেডা?
-রোকনের লগে আমার ট্রেনে দেহা হইছিলো। অনেক ভালো ছোকরা। হেও বাড়ি থেকা পালায় আইছিলো যুদ্ধ করবো বইলা।
-শেষে?
-আমরা সৈন্যগো চক্ষু আড়াল কইয়া সেখান থেকা একরকম বাইর হইয়া আইসিলাম।
জহির খানিকটা পান মুখে দিয়া আবার বলা শুরু করিলো-
এক মস্ত বড় জমিদার বাড়ির সামনে দিয়া যাওয়ার পথে এক মেয়ে মানুষের ডাক শুনি। বিণু খালা আসিলো।
মিনিট সাতেক পরে আসিয়া সমস্ত ঘটনা শুনতে চাইলো। রোকন তারে সবই কইলো। খালা আর দ্বিতীয় কোনো রকম চিন্তা ছাড়াই আমাগো তার বাড়ির পিছনের ঘরটা থাকতে দিলো। আমার প্রায় একমাস বিশ্রাম করা লাগছিলো। খালা দিনরাত মোর সেবা করছিলো। নিজ ছেলের মতো। আমারে বাবা কইয়া ডাকতো।
রোকন শ্রমিক দলের লগে যোগদান করছিলো। একটু ঠিক হওনের পরে আমিও যোগ দেই।আর থাকিতে না পাইরা মরিয়ম ঘর থেকে বের হইয়াই জিজ্ঞেস করলো-
-ওনার এই হাল হইছে ক্যামনে তাইলে? কে করসে?
-হের পরিবারের লোকজন। যুদ্ধ বিরতিতে একবার খালার কথা খুব মনে ধরছিল। আমি আর রোকন মিলা হাজির হইলাম হের বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাড়ির সামনে গিয়া দেখি খালা রাস্তা খারায় আছে। রোকন কইলো দেশের এই পরিস্থিতিতে এমনে মাইয়া মানুষের রাস্তায় খারায় থাকোন উচিৎ না।
খালা তখন কইলো – মনু চইলা আসবে, আরেকটু অপেক্ষা করি।
এক সূত্রে জানা গেল বিণু খালার একমাত্র ছেলে মনু চৌধুরী তার মায়ের অজান্তেই বাড়ি বিক্রি করিয়া দিয়া বউ সন্তান লইয়া চোরা উপায়ে বিদেশ পাড়ি দিসে। তার ভাই- বোইনরাও খবর লয় না।
একটু থেমে জহির পুনরায় বলা শুরু করিলো-
খালার অহন আশ্রয় লাগবো। আমি ঢাকা শহরে কাউরেই চিনি না তেমন। বিশ্বস্ত কেউই নাই যার বাড়িতে তারে ঠাঁই দিতে পারুম। তখনই আপনাগো কথা মনে হইছে। এই মুহূর্তে আমি আর বিশ্বস্ত কাউরে দেখতাছি না। ফিরায় দিও না আল্লাহর দোহাই লাগে। হেরে আমি আর রোকন সমস্ত সুরক্ষা দিয়া এই অব্দি আনছি। শুয়োর গো উর্দি পর্যন্ত চুরি কইরা পড়ছি যাতে সন্দেহ না করে।
-মানুষ কি রকম জাহান্নামি হইতে পারে। আল্লাহর গজব পড়বো এইগুলার উপর। আপনজন হইয়া এইসব করতে পারিলো? -মরিয়ম
-আহা শান্ত হও বিবি। যাও ঘরে গিয়া খালার কাছে বহো। হের দেহো যদি কিছু লাগে আবার। আর জহির তুমি চিন্তা কইরো না। তোমার বিণু খালা এখানে সুরক্ষিত থাকিবে। আমাদের সামর্থ্যে যতটুকু সম্ভব আমরা করুম। তুমি নিশ্চিত থাকো।
-শুকরিয়া চাচা।
-তা তুমি ফিরে যাইবা কবে দেশ রক্ষার্থে? তোমার বন্ধু তো ঐহানে তোমারে ছাড়া একলা পইরা যাইবো।
-আমি কিছুদিন আছি এইখানে চাচা। আর রোকন আর চেয়ে ভালো যোদ্ধা। অয় এত জলদি সমর্পণ করবো না। এই আমার বিশ্বাস।
-বেশ।
পরদিন সকালে কমলা এসে হাজির। -ও মরিয়ম চাচি দরজা খুলো। দেহো আমি তোমার লেগা শিউলি ফুলের মালা আনসি।
-আয় আয় ভিতরে আয়। আজকে এ মালা আমারে না বিণু খালারে পড়াইয়া দেও।
-বিণু খালা? হেরে তো চিনলাম না।
-ওই এক লম্বা কাহিনী। সময় হইলে কমু নে। যা ভিতরের ঘরে আছে।
কমলা মেয়েটা বড়ই চাঞ্চল্যকর। গোলাকার মুখে সবসময় হাসি লেগেই থাকে।
-খালা আমার নাম কমলা। আমি দুই বাড়ি পরেই থাকি। আব্বা আমার কাঠমিস্ত্রি।
খালা কোনো কথা কইলো না। জানালা দিয়ে সেই নীল আকাশটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
-খালা তোমার চুল এমন রূক্ষ ক্যান? আসো তোমারে মাথায় তেল দিয়া দেই।
চুলে তেল মালিশ করিতে করিতে কমলা গান ধরিলো-
ওগো তোমার কলের গানে মুগ্ধ হইয়া
আমি মাঝি দাঁড়াইয়া শুনি নৌকা থামাইয়া।
এই গান শুনিতেই বিণু খালা আরেকটা গান ধরিলো। তার কন্ঠে সমস্ত দুঃখ কষ্ট প্রকাশিত হইলো।
আমারে ছাইরা দিতে পারলেও
আমি পারি নাই মুখ ফিরাইতে
সন্ধ্যা নামিলে জ্বলে না ঘরের বাতি
বিচ্ছেদ গানের স্রোত ভাসিয়া আসে মোর কানে।
সন্ধ্যা বেলা রহমান শেখ ঘরে ঢুকতেই বিণু খালা বলিয়া উঠিলো- মনু
-না খালা আমি মনু নই। তবে আমি তোমার ছেলের মতই। তোমার যতদিন ইচ্ছা এই ছেলের বাড়িতে থাকতে পারো। -রহমান শেখ।
-সেদিন বিণু খালা স্বাভাবিক হইয়া দুইটা কথা কইলো। তোমারে আর তোমার বিবিরে আল্লাহ অনেক ভালো রাখুক। আমার মতো বোঝারে ঠাঁই দিসো। জহির ছোকরাডাও প্রাণ দিয়া করছে আমার লেগা। ওর আশা সব আল্লাহ পূর্ণ করুক।
-তুমি বোঝা না তুমি ওহন এই বাড়িরই সদস্য। আমার বিবি তোমারে মা সমতূল্য দেখে। তোমার যদি কিছু লাগে আমারে বা আমার বিবিরে মন খুইলা কইবা কেমুন?
-সেদিন প্রথম বিণু খালাকে সাময়িক সময়ের জন্য হাসতে দেখা গেল।
এদিকে কমলা আর জহিরের বেশ খাতির হইয়া গেল। জহির যুদ্ধের সকল কাহিনী কমলারে বলিয়া তারে একরকম ভয় দেখায়। তাহার ভীত চাহনি দেখিয়া জহির বেশ মজা পায়।
কমলা সুযোগ পাইলেই জহিরের জন্য এটা ওটা নিয়ে আসে। সে প্রায় বিণু খালারে গান ও শুনায় যা জহির অত্যন্ত মুগ্ধ হয়ে শুনে।
চারদিন পর জহির এক সূত্রে জানতে পারিলো রোকন বিপক্ষ সৈনিকদের হাতে ধরা পরে যায় এবং তার ফাঁসি হয়। এই খবর পাইয়া জহির সেদিন রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। যাওয়ার আগে সেদিন কমলারে কথা দিয়া যায় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গ্ৰামে আসিয়া তারে বিয়ে করিব। কমলাও সেদিনের পর একরকম অপেক্ষা করিতে লাগিলো।
১৯৭১ সাল ১৩ই ডিসেম্বর পুলিশের গুলিতে জহিরের মৃত্যু হয়।
বিজয় আসার পর একবছর কেটে যায়। সবাই জহিরের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে স্বাভাবিক হইতে শুরু করে। কমলা এখন কলেজে যায়। রহমান শেখের ব্যবসায় আবার স্বস্তি ফিরিয়া আসিলো।
এখন রমজান মাস চলে। সন্ধ্যার ইফতারের জন্য মরিয়ম বিণু খালারে ভিতরের ঘরে ডাকিতে গেল। বহুবার ডাকের পরও খালা কোনো জবাব না দিলে রহমান শেখ ডাক্তার ডাকিয়া আনে। তিনি আসিয়া নিশ্চিত করেন বিণু খালা গত হইয়াছে। সারা গ্ৰামে একরকম কান্নাকাটি বাধিয়া গেল। জানাজা শেষে তারে ঢাকার উদ্দেশে নিয়া গেল। মুক্তিযোদ্ধা জহিরের কবরের উপর তাহার কবর খোঁড়া হইলো।
অতঃপর, খোদাই করে লেখা হইলো মুক্তিযোদ্ধার মা বিণু খালা।
লেখাঃ সামিহা হোসেন অর্পা